ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন গণভোট চায় যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি। এ ভোট আয়োজন প্রশ্নে পার্লামেন্টে ভোটের প্রস্তাব দিয়েছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট ঠেকাতে কয়েকটি বিকল্পপথের মধ্যে দ্বিতীয় গণভোট প্রশ্নে এমপিদের এ ভোট করার প্রস্তাব দিয়েছে লেবার। গত সোমবার রাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনা জানানোর পর পার্লামেন্টে এ বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়।

আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইইউর সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) করতে হবে। অথচ কী প্রক্রিয়ায় সম্পর্কোচ্ছেদ করা হবে, তা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে গত ১৫ জানুয়ারি সম্পর্কোচ্ছেদের পথরেখার যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন, তা ৪৩২-২০২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। আধুনিক যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টে এত বড় ব্যবধানে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়নি।

ব্রেক্সিট প্রশ্নে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে যুক্তরাজ্য। ১৯৭৩ সালে ইইউতে যোগ দেয় দেশটির জনগণ। ২০১৬ সালের ২৩ জুন এক ঐতিহাসিক গণভোটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয়। কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সেই পথ বের করার জন্য সময় নেওয়া হয় ২১ মাস। পার্লামেন্টে বড় পরাজয়ের পর মে বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে সংকট সমাধানে সমানে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে সংকট থেকে উত্তরণের কোনো এখন পথ এখনো পাওয়া যায়নি।

মের খসড়া চুক্তি পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই লেবার পার্টি একটি সংশোধনীর মাধ্যমে ‘কোনো চুক্তি ছাড়া’ বিচ্ছেদ আটকাতে পার্লামেন্টকে আরো সময় দেওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। লেবার পার্টি ‘কোনো চুক্তি ছাড়া’ বিচ্ছেদের চাইতে বরং ইইউয়ে থেকে যাওয়ার পক্ষে। লেবার নেতা করবিন বলেছেন, লেবার পার্টির বিকল্প (ব্রেক্সিট) পরিকল্পনাকে মঞ্চে উপস্থাপন করার সময় এসেছে। যদিও চিন্তাভাবনার জন্য সব বিকল্পই উপস্থাপন করতে হবে, যার মধ্যে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনও রয়েছে।

এই প্রথম লেবার নেতারা পার্লামেন্টে সম্ভাব্য দ্বিতীয় গণভোট আয়োজন প্রস্তাব নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়েছে। ব্রেক্সিটবিরোধী অন্য দলগুলো তাদের সমর্থন জানিয়েছে। তবে লেবার নেতারা এটাও বলেছেন, বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব রাখলেও তারা এটাকে প্রকৃত অর্থে সমর্থন করেন না।

অন্যদিকে, এমপিরা এই প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের এমপিরা বিচ্ছেদের সময় পিছিয়ে দেওয়ার জন্য ছয়টি সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়েছেন। তার মধ্যে নতুন করে ভোট আয়োজন এবং সরকারের কাছ থেকে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে তুলে নেওয়ার প্রস্তাবও আছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ব্রেক্সিটের পরবর্তী প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে।

"