আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯

হিন্দুত্ববাদীদের হাতে হেনস্তার শিকার কবি শ্রীজাত

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ফের হেনস্তার শিকার হয়েছেন কলকাতার কবি শ্রীজাত। আর এবারও বিতর্কের মূলে ত্রিকূল নিয়ে লেখা তার কবিতা। গত শনিবার সন্ধ্যায় আসামের শিলচরে হেনস্তার শিকার হন তিনি।

গতকাল রোববার শিলচরে একটি সংস্থার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন শ্রীজাত। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের খবরে বলা হয়েছে, ওই অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকেই নানা কথা বলছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও শ্রীজাতের লেখা পুরনো বিতর্কিত সেই কবিতার প্রসঙ্গ তুলে বহু উসকানিমূলক পোস্ট করা হচ্ছিল। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশও মোতায়েন করেছিল স্থানীয় প্রশাসন।

এরপর অনুষ্ঠান শুরুর পর হঠাৎই এসে হাজির হন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পাঁচ-ছয়জন কর্মী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, তারা প্রত্যেকেই স্থানীয় বজরং দলের লোক। অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রথমেই কোনো ঝামেলা করেননি তারা। উদ্যোক্তাদের কাছে এসে তারা জানিয়েছিলেন, তাদের কিছু কথা বলতে দিতে হবে। সেই সময় স্থানীয় শিল্পীদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল। উদ্যোক্তারা তাদের বলেন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার জন্য।

সংবর্ধনাপর্ব শেষ হওয়ার আগেই ফের কথা বলার দাবি তোলেন ওই হিন্দুত্ববাদীরা। বাধ্য হয়ে তাদের কথা বলতে দেন আয়োজকরা। তখন, তাদের মধ্যে একজন মাইকে এসে বলেন, কবি শ্রীজাতের কাছে তার একটা কবিতার লাইনের ব্যাখ্যা চান তারা। বলে, শ্রীজাতের সেই বিতর্কিত কবিতার পংক্তিটির ব্যাখ্যা জানতে চান তারা। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে যান সবাই।

তারপর ওই অনুষ্ঠানে হাজির এক স্থানীয় সাংবাদিক তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেন এই আচরণের। তিনি জানান, শ্রীজাতের কোনো কবিতার লাইনের অর্থ জানার থাকলে অন্য সময়ে তারা সেটা জানতে চাইতে পারেন। কিন্তু এভাবে একটা অনুষ্ঠান চলার সময়, বাধা দিয়ে এমন প্রশ্ন করতে পারেন না তারা।

হিন্দুত্ববাদীরা পাল্টা উত্তর দেন, অনুষ্ঠানে বাধা দিতে তারা চান না। শুধু কবি শ্রীজাতের কাছ থেকে তার ওই পংক্তিটির উত্তর শুনেই বেরিয়ে যাবেন তারা।

এই কথার প্রতিবাদ করেন ওই অনুষ্ঠানে আসা অন্যরাও। উদ্যোক্তা ও পুলিশের লোকেরা কার্যত জোর করেই বাইরে বের করে দেন অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া ওই পাঁচ-ছয়জনকে।

এরপরেই ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। হোটেলের সামনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা জড়ো হয়ে সেøাগান দিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে হোটেল লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তেও শুরু করে উত্তেজিত জনতা। ভাঙে হোটেলের কাঁচও।

এরপরই হোটেল কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করে। এমনকি কিছু লাইটও বন্ধ করে দেয় তারা। কিন্তু বাইরে উত্তেজিত জনতার সামনে বেরোতে ভয় পান অনেকেই। অবশেষে ৯টা নাগাদ স্থানীয় কয়েকজন সাহস করে হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। সেই সময় তাদের লক্ষ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকে উত্তেজিত জনতা।

এর কিছুটা পরেই আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ জোর করে ঢুকে যায় হোটেলের ভেতরে। দাবি করে শ্রীজাতকে তুলে দিতে হবে তাদের হাতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে বাঁচাতে শ্রীজাতকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় হোটেলেরই একটা ঘরে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পাঠানো হয় বিরাট পুলিশ বাহিনী। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে কোনোমতে উদ্ধার করা হয় কবি শ্রীজাতকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close