আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৬ জানুয়ারি, ২০১৯

গ্রেট ব্রিটেনকে এ বছরই পেছনে ফেলবে ভারত?

২০১৮ সাল জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে সারা বিশ্ব। সেই মন্দার আবহ থেকে বেরোতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ ইউরোপের দেশগুলো। তবে এই মন্দার বাজারে ২০১৮ সাল জুড়ে গড় জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হিসাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশকে পেছনে ফেলে সামনের সারিতে আছে ভারত। দেশটি এই মুহূর্তে পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

উৎপাদন বৃদ্ধির সেই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরেই গ্রেট ব্রিটেনকে সরিয়ে পঞ্চম স্থান দখল করে নেবে ভারত। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা ভারতের জন্য এই ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু সেই পথ খুব একটা মসৃণ হবে না ভারতের জন্য। এ বছরেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দেশটির লোকসভা নির্বাচন সেই পথ বন্ধুর করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, এই মুহূর্তে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই আছে চীন, জাপান, জার্মানি এবং ইংল্যান্ড। ষষ্ঠ স্থানে ভারত। তার পরই আছে ফ্রান্স। ২০১৮ সালে ভারতের গড় জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির যে ধারা এবং ২০১৯ সালে ভারতের জন্য বিভিন্ন সংস্থা যে পূর্বাভাস দিয়েছে, সেই হিসাবে নিশ্চিতভাবেই ইংল্যান্ডকে ছাপিয়ে পঞ্চম স্থানে চলে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু জিডিপি বৃদ্ধির সেই ধারা অব্যাহত থাকছে কি না, এটাই এখন বড় প্রশ্ন ভারতের সামনে।

প্রথম কারণ অবশ্যই সারা বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা মন্দা। সেই কারণে ২০১৯ সালে বৃদ্ধির হার কমিয়ে ২.৮ শতাংশ করেছে আর্থিক সংস্থা নমুরা হোল্ডিংস। ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৩.২ শতাংশ। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সেই মন্দার ধাক্কা কতটা সামলাতে পারবে ভারত, তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছুই। তবে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, ভারতের ক্ষেত্রে অনেকটাই কমবে রফতানি, উৎপাদন এবং বিনিয়োগের পরিমাণ। ২০১৯-এ কোন পথে চলবে ভারতের অর্থনীতি, তার ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছুই। ২০১৮ সালে দুইবার সুদের হার বাড়িয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক। এই মুহূর্তে কমছে বাজারের চাহিদা, বিশ্ব বাজারে কমছে তেলের দামও।

সেক্ষেত্রে কমতে পারে মুদ্রাস্ফীতির হার। তাই ২০১৯-এ সুদের হার কমাবে রিজার্ভ ব্যাংক, এমনটাই অনুমান অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। কারণ, কিছুদিন আগেই অপ্রত্যাশিতভাবে সবাইকে অবাক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষকর্তার পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন উর্জিত পটেল।

সবার ওপর আছে সাধারণ নির্বাচন। ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে এই বছরটি নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিতভাবেই বাড়বে অপরিকল্পিত খাতে খরচের বহর। সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে সেই প্রতিযোগিতা। কৃষি ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ঢালাও ছাড়। ছাড় দেওয়া হচ্ছে জ্বালানিতেও। এই ‘জনমোহিনী’ খরচ নিশ্চিতভাবেই দুর্বল করবে ভারতের অর্থনীতিকে।

এতে করে ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার। শেষ তিন মাসে বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশ। তার ঠিক আগের ত্রৈমাসিক রিপোর্টে এই বৃদ্ধির হার ছিল আট শতাংশের কাছাকাছি। বিভিন্ন পণ্যের জিএসটি-ও কমানো হয়েছে পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলের পরপরই। বাজেট ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল, তা অক্টোবরেই ছুঁয়ে ফেলেছে ভারতীয় অর্থনীতি। যদিও তা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাজেট পেশের পরই।

এই সমস্ত জট যদি সামলানো সম্ভব হয়, তাহলে ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০, এই দুটি পরপর অর্থবছরে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার থাকবে ৭-এর ওপরে। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার পূর্বাভাস তাই বলছে। এই পূর্বাভাস মিললে ২০১৯ সালেই ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে ভারত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close