আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮

ম্যাক্রোঁর পিঠটান, ‘প্রহেলিকা’ বলছেন বিক্ষোভকারীরা

টানা বিক্ষোভ প্রশমন করতে মজুরি বাড়ানো, কর কমানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ‘অনমনীয়’ হিসেবে পরিচিত ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বিক্ষোভকারীরা। দেশে বিদ্যমান সরকারবিরোধী ক্ষোভ ও আন্দোলনকে নিবৃত্ত করতে গত সোমবার বেশকিছু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় ভবন এলিসি প্যালেস থেকে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ১৫ মিনিটের ভাষণে ৪০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক বলেন, ‘(উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য) আমি দায়িত্ব স্বীকার করে নিচ্ছি।’ অনমনীয় ও কঠিন হিসেবে পরিচিত এই সাবেক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার ভাষণের সময় বেশ নমনীয় ছিলেন। ‘আমি জানি, আমার নানা বক্তব্যে অনেকেই আহত হয়েছেন’ বলেন তিনি। তবে এই জনগণের, বিশেষ করে ছোট শহর ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের, এই ক্ষোভ বহু বছর ধরে সঞ্চিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ‘এই ক্ষোভ একদিনের নয়। এমন চলতে থাকবে যেন আমরা মেনেই নিয়েছি’ মাক্রোঁ বলেন। ‘৪০ বছরের অসহিষ্ণুতা আজ বেরিয়ে এসেছে।’

মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট যেসব উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন, তার একটি হলো ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১০০ ইউরো বাড়ানো। এই খরচ অবশ্য কোম্পানিগুলোকে দেখাতে হবে না। আগে ন্যূনতম মাসিক মজুরি করসহ ১ হাজার ৪৯৮ ও কর বাদে ছিল ১ হাজার ১৮৫ ইউরো। এর আগে মাক্রোঁর সরকার মজুরি বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, মজুরি বাড়ালে চাকরির সুযোগ বাড়বে তো নাই, বরং কমবে। মাক্রোঁর সিদ্ধান্তের কারণে তাকে এলিট বা ধনিক শ্রেণির প্রেসিডেন্ট বলে সমালোচনা করেছেন অনেকে। অনমনীয় অর্থনৈতিক সংস্কারক হিসেবে পরিচিত এই প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ছিল দূষণবিরোধী জ্বালানি কর আরোপ করা। এই সিদ্ধান্তে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরশীল ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়। প্যারিসের রাস্তায় বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, মাক্রোঁর সরকার জ্বালানি কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। কিন্তু তাতেও দমেননি ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা। তাদের বিক্ষোভ চলমান থাকলে শেষ পর্যন্ত এই ভাষণ দিতে বাধ্য হন ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট। ২০১৭ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মাক্রোঁ এ ছাড়া ওপেনশনের আয়ের ওপর কর বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, সেখান থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান বছর শেষে কর্মীদের বোনাস দিতে পারবে, সেই বোনাসও করমুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।

মাক্রোঁর বক্তব্য ‘প্রহেলিকা ও ধাপ্পাবাজি’

মাক্রোঁর বক্তব্যকে ‘প্রহেলিকা ও ধাপ্পাবাজি’ বলে উল্লেখ করেছেন হলুদ জ্যাকেট পড়া আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তারা বলছেন, মাক্রোঁ যা দেওয়ার কথা বলেছেন তা সমুদ্রের মাঝে এক ফোঁটা জল। দক্ষিণাঞ্চলের শহর লা বোলো’তে এক সমাবেশে জ্যঁ-মার্ক নামের এক গাড়ি মেকানিক বলেন, ‘তিনি এক আঙুলের ওপর ভর করে নাচছিলেন। এখন গোঁড়ালির ওপর দাঁড়াতে চাচ্ছেন। তার সব প্রতিশ্রুতি ধোঁয়াশায় ভরা।’ থিয়েরি নামের ৫৫ বছর বয়সী এক বাইসাইকেল মেকানিক দাবি করেন, ‘মিডিয়ার জন্য এসব কথা বলেছেন তিনি।’

বিরাট আর্থিক ক্ষতি

এদিকে ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত কিছুদিন ধরে চলা দেশব্যাপী বিক্ষোভে ৮০০-১০০০ কোটি ইউরোর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় ব্রডকাস্টার বিএফএম-টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের এক মুখপাত্র এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে অর্থ সংস্থান করে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close