আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি হুমকি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ১৯৮৭ সালে সাক্ষরিত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি নিয়ে একে অপরকে পাল্টাপাল্টি হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত ওই ঐতিহাসিক ‘আইএনএফ’ চুক্তি মানতে গত মঙ্গলবার রাশিয়াকে ৬০ দিনের সময় দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। অন্যথায় তারা চুক্তির ইতি টানার হুমকি দিয়েছে।

এরপরই গত বুধবার এর জবাবে রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে শুরু করলে মস্কোও ওই চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ সব ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে শুরু করবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এ দিন টিভিতে এক মন্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অজুহাত দাঁড় করানোর জন্যই রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে।

১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত মাঝারি পাল্লার এ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি (আইএনএফ) বাতিল হলে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

রাশিয়া বহু বছর ধরে চুক্তিটি লঙ্ঘন করে আসছে বলে অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের দায় এখন রাশিয়ার। শুধুমাত্র তারা এখন এই চুক্তি বাঁচাতে পারে।

তিনি বলেন, বেধে দেওয়া ৬০ দিনের মধ্যে রাশিয়া চুক্তি মানতে সম্মত না হলে ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তির সমাপ্তি টানতে ছয় মাসের প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হবে। যদিও এ সময়টিতে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে না বা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে না বলেও জানিয়েছেন পম্পেও। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে নেটোর প্রধান কার্যালয়ে এক সম্মেলন শেষে এ কথা বলেন তিনি।

এদিকে পুতিন বলেন, এখন মনে হচ্ছে আমাদের আমেরিকান শরিকরা মনে করছে পরিস্থিতি এতটাই বদলেছে যে যুক্তরাষ্ট্রকেও ওই ধরনের অস্ত্র হাতে রাখতে হবে। তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? সে ক্ষেত্রে আমরাও ওই একই কাজই করব।

পুতিন জানান, আইএনএফ চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র বহু দেশই বানায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আইএনএফ চুক্তির মধ্য দিয়ে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর গন্ডি বেধে দিয়েছিল। চুক্তির আওতায় এ ধরনের অস্ত্র উন্নয়ন সীমিত হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নতুন অস্ত্র উন্নয়ন করতে পারছে না। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য তাদের অস্ত্র দরকার। তাই আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যেতে চাওয়ার এটিও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৮৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে আইএনএফ চুক্তি অনুমোদন পাওয়ার পর ওই বছর জুনেই তা কার্যকর হয়েছিল। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া উত্তরসূরি হিসেবে চুক্তিটির অংশ বলে বিবেচিত হয়।

আইএনএফ চুক্তি নিয়ে পম্পেওর অবস্থানে নেটোভুক্ত দেশগুলো সমর্থন দিয়েছে বলে জানায় নিউইয়র্ক টাইমস। নেটো নেতারা মস্কোর প্রতি চুক্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

নেটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, আমরা রাশিয়ার প্রতি জরুরি ভিত্তিতে আইএনএফ চুত্তিতে সম্পূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য সম্মতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এখন সবকিছু রাশিয়ার ওপর নির্ভর করছে।

যদিও রাশিয়া এই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, রাশিয়া চুক্তির সব শর্ত সম্পূর্ণভাবে মেনে চলছে। অপরপক্ষ আমেরিকা এটা খুব ভালো করেই জানে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close