আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

ব্রেক্সিট চুক্তি

কমন্সের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটে হারলেন মে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অনুমোদন পাওয়া ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টের ভোটে ওঠার আগেই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে এ-সংক্রান্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটে পরাজিত হয়েছেন তিনি, জানিয়েছে বিবিসি।

এর আগে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া চুক্তি নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জিওফ্রে কক্স তার আইনি পরামর্শের সংক্ষিপ্ত সার কমন্সে তুলেছিলেন। সংসদ সদস্যরা একে ‘পার্লামেন্টের অবমাননা’ আখ্যা দিয়ে ওই পরামর্শের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখতে চেয়েছেন। আগামী সপ্তাহের পার্লামেন্ট ভোটে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তিটি প্রত্যাখ্যাত হলে কী ঘটবে, তা কমন্সকে জানাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের রায় পড়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ এ ভোটগুলোতে পরাজয়ের পর অসন্তোষ লুকাননি মে। বলেছেন, ২০১৬ সালের গণভোটের রায় বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যদের দায় আছে। ইইউয়ের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের জন্য থাকা প্রস্তাবগুলোকে ‘সম্মানজনক সমঝোতা’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে জোটটির সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ে প্রস্তাব নিয়ে কমন্সে পাঁচ দিনের বিতর্কের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে মে এসব বলেন, জানিয়েছে বিবিসি। দীর্ঘ আলোচনার পর গত মাসে মে ও ইইউ নেতারা ব্রেক্সিট নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছালেও, সেটি চূড়ান্ত করতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সমর্থন লাগবে। ১১ ডিসেম্বরের ভোটের পর তা নিশ্চিত হবে।

হাউস অব কমন্সে অ্যাটর্নি জেনারেলের আইনি পরামর্শের পূর্ণাঙ্গ অংশ উপস্থাপনের প্রস্তাবটি ৩১১-২৯৩ ভোটে পাস হয় বলে জানায় বিবিসি। সোমবার ওই পরামর্শের সংক্ষিপ্ত রূপ দিয়েছিলেন কক্স; পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে তিন ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি ‘জাতীয় স্বার্থে’ পূর্ণাঙ্গ পরামর্শটি দিতে রাজি হননি।

গত মাসে হাউস অব কমন্স চুক্তি বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ চেয়েছিল। সেদিকে ইঙ্গিত করে লেবার পার্টির সংসদ সদস্যরা কক্সের সংক্ষিপ্ত সারকে ‘মন্ত্রীদের ইচ্ছাকৃতভাবে পার্লামেন্টের নির্দেশ না মানার’ নজির হিসেবে অভিহিত করেন। লেবার সংসদ সদস্যরা এরপর আগামী মঙ্গলবারের ভোটের আগেই পরামর্শটির পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশের দাবি জানায়। এ নিয়ে ভোটে ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে অবস্থান নেয় ছয় বিরোধী দল। রক্ষণশীলদের সঙ্গে জোটে থাকা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ডেমোক্রেটিক পার্টির সংসদ সদস্যরাও আইনি পরামর্শের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখার পক্ষেই অবস্থান জানান। এর আগে সরকারের করণীয়সহ আইনি পরামর্শ সংক্রান্ত পুরো বিষয়টি সাংসদীয় কমিটিগুলোর কাছে উত্থাপনে মন্ত্রিসভার একটি প্রস্তাব চার ভোটে পরাজিত হয়। ইইউর সঙ্গে হওয়া চুক্তিটি পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হলে কী করতে হবে সরকারকে সে সংক্রান্ত পরিকল্পনা ২১ দিনের মধ্যে হাউস অব কমন্সে তুলতে মঙ্গলবার অন্য একটি প্রস্তাবেও সংসদ সদস্যরা সায় দেন।

এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি নিম্নকক্ষে ৩২১-২৯৯ ভোটে গৃহীত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ ভোটগুলোতে হেরে যাওয়ায় সরকার ‘ভয়াবহ বিপদে’ পড়তে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ভিন্স কেবল।

থেরেসা মের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাষ্পে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তার চুক্তিটির সক্ষমতাও বাষ্পীভূত হচ্ছে,’ বলেছেন তিনি। হাউস অব কমন্সে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে মে বলেছিলেন, চুক্তি নিয়ে আর কোনো আলোচনায় বসতে ইইউ রাজি নয় বলে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে।

‘আমি কখনোই বলিনি চুক্তিটি নিখুঁত, এমনটা কখনোই হয় না। মধ্যস্থতার প্রকৃতিই এমন। ব্রিটিশ জনগণের জন্য এটিই যে সবচেয়ে ভালো চুক্তি হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি। সংবিধান ও দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থে এ চুক্তিতে সমর্থন দিতে আপনাদের প্রতি অনুরোধ করছি,’ বলেন মে।

লেবার নেতা জেরমি করবিন ইইউর সঙ্গে হওয়া চুক্তিটিকে ‘বাজে চুক্তি’ আখ্যা দিয়ে একে প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান। তার দল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান এ বিরোধী নেতা। তিনি বলেন, মঙ্গলবার এ হাউস তার সিদ্ধান্ত জানাবে। এটি প্রত্যাখ্যাত হবে বলেই আমার প্রত্যাশা। এ বিষয়ে সরকার হাউসের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। হয় তারা ইইউর কাছ থেকে আরো ভালো চুক্তি নিয়ে আসুক, নয়তো যারা তা করতে পারবে তাদের হাতে ছেড়ে দিক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close