আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

ধারাবাহিক অনশনকেই প্রতিবাদের ভাষা করেছেন যে ফিলিস্তিনি বন্দি

বিচারবহির্ভূত আটকাদেশের প্রতিবাদে ইসরায়েলি সামরিক কারাগারে ৫৫ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন ফিলিস্তিনি কারাবন্দি খাদের আদনান। ৪০ বছর বয়সী আদনানের স্ত্রী রান্দা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এ কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিপরীতে ধারাবাহিক অনশনকেই প্রতিবাদের ভাষা বানিয়েছেন খাদের। ২০০৪ সাল থেকে চারবার ইসরায়েলি কারাগারে আমরণ অনশন করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। এর মধ্যে একবার তার অনশন ৬৭ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছিল। খাদেরের স্ত্রী রান্দা দাবি করেছেন, অনশন ভাঙাতে নির্যাতনসহ নামামুখী চাপ দেওয়া হচ্ছে তার স্বামীকে। ২০১৫ সালে কারামুক্তির পর সন্তানদের সঙ্গে খাদের আদনান প্রশাসনিক আটকাদেশের প্রতিবাদে প্রথমবার ২০০৪ সালে ২৫ দিন অনশন করেন আদনান। এই আদেশে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ছয় মাস পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের আটক রাখতে পারে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এই মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য নবায়ন করা যায়। ফলে প্রশাসনিক আটকাদেশের কারণে ফিলিস্তিনি বন্দিরা বছরের পর বছর কারাগারে থাকতে পারে। দ্বিতীয়বার আদনানের ৬৭ দিনের অনশন শেষ হয় ২০১২ সালে। তৃতীয়বারের মতো তিনি অনশন করেন ২০১৪ সালে। সেবার এটি ৫৪ দিন দীর্ঘ অনশনের পর মুক্তি মিলেছিল তার। দ্বিতীয়বার অনশন করে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিলেন আদনান। ইসরায়েলের প্রশাসনিক আটকাদেশের প্রতিবাদে ওই আদেশে বন্দি ফিলিস্তিনিরাও তার সঙ্গে অনশন শুরু করেন। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর কোনো অভিযোগ ছাড়া আটক করে তাকে আবারও কারাগারে নেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এর প্রায় ৯ মাস পর গত ২ সেপ্টেম্বর অনশন শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক আদালতে তার বিচার ১৭ বার স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৯ অক্টোবর তার মামলার পরবর্তী শুনানির কথা রয়েছে।

রান্দা জানান, অনশনের ৫১তম দিনে গত ২২ অক্টোবর দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছে সালেম সামরিক আদালতে স্বামীর সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছিল তার। তিনি জানান, সেদিন বোস্তা নামে পরিচিত ইসরায়েলি সামরিক যানে করে তাকে আদালতে আনা হয়েছিল। রান্দা বলেন, ‘তার মুখ ফ্যাকাশে হয়েছিল আর চুল আর দাড়ি ছিল লম্বা। আমরণ অনশন ভাঙতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তারা তাকে গোসল, দাড়ি কাটা বা পোশাক পরিবর্তনও করতে দেয় না’। রান্দা বলেন, ‘তাকে পরীক্ষা করতে কোনো ডাক্তারকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি তার ওজন অর্ধেক কমে গেছে, কানেও কম শুনতে পাচ্ছেন।

একটি হুইলচেয়ারে করে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন আর এতটাই দুর্বল ছিলেন যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না’।

ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন ফিলিস্তিনি ইসলামিক জেহাদের সদস্য খাদের আদনান। ২০০৪ সাল থেকে ১১ বার কারাবন্দি হয়েছেন তিনি। ইসরায়েলি কারাগারের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন এই অ্যাকটিভিস্ট। চলতি মেয়াদে আমরণ অনশন শুরু করলে ইসরায়েলি কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে নির্জন কারা কক্ষে পাঠায়। রান্দা বলেন, প্রথমে তাকে দখলকৃত পশ্চিম তীরের রিমন ও পরে জামালায় ইসরায়েলি কারাগারে রাখা হয়। তিনি বলেন, তার কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, আইনজীবী না মানবাধিকার সংস্থার কর্মীদেরও না। আমরণ অনশনের ৩১তম দিনে রেড ক্রস তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আর ৩৭তম দিনে তাকে রামলে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই বর্তমানে আছেন তিনি। রান্দা বলেন, ‘বিশ্ব ও ফিলিস্তিনে বিজয়ের প্রতীক হয়ে ওঠায় আদনানের মনোবল ভেঙে ফেলতে চাইছে তারা’।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close