আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র

ইউরোপীয় দেশগুলোকে পুতিনের হুশিয়ারি

কোনো ইউরোপীয় দেশ মার্কিন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসাতে সম্মত হলে সে দেশটিকে লক্ষ্যস্থল বানাতে রাশিয়া বাধ্য হবে বলে হুশিয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। সোভিয়েত আমলে স্বাক্ষরিত একটি রুশ মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে ওয়াশিংটন বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর বুধবার এ হুশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। ইতালির প্রেসিডেন্ট জুসেপ্পে কোন্তের সঙ্গে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলে জানান। ১১ নভেম্বর এই দুই নেতা ফ্রান্সের প্যারিসে আলোচনায় মিলিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত আইএনএফ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প; রাশিয়া এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তার।

অপরদিকে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘বিপজ্জনক’ বলছেন পুতিন। ট্রাম্পের অভিযোগ অস্বীকার করে শুধু ওয়াশিংটনই চুক্তিটি লঙ্ঘন করছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে রাশিয়া। আইএনএফ চুক্তির আলোকে ইউরোপে মোতায়েন ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছিল দেশ দুইটি।

মঙ্গলবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, রাশিয়া এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের আপত্তি সত্ত্বেও চুক্তিটি থেকে শিগগিরই বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

চুক্তিটি থেকে ওয়াশিংটন বেরিয়ে এলে মস্কোও পাল্টা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প যদি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চুক্তি থেকে সরে যায় তাহলে রাশিয়া কী করবে, এমন প্রশ্নে পুতিন বলেন, সরাসরি উত্তর দিচ্ছি। আমরা কি প্রতিক্রিয়া দেখাব? আমরা দেখাব, আর সেটি হবে খুব দ্রুত ও কার্যকরী।

যুক্তরাষ্ট্র আইএনএফ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ‘কোথায় হাজির হবে, এটাই মূল প্রশ্ন’ বলে উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ‘যদি তারা সেগুলো ইউরোপে সরবরাহ করে, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রতিক্রিয়ায়ও এর প্রতিফলন থাকবে। ইউরোপের যেসব দেশ সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাখতে রাজি হবে, যদি ব্যাপারটা ওই পর্যন্তই গড়ায়, বুঝতেই পারছেন তারা তাদের নিজস্ব ভূখ-কে সম্ভাব্য পাল্টা হামলার ঝুঁকিতে ফেলবে,’ বলেছেন তিনি। ইউরোপকে ‘এ ধরনের বিপদে ফেলার’ প্রয়োজন পড়ল কেন, তা বুঝতে পারছেন না বলেও জানান পুতিন। এটা এমন এক পরিস্থিতি, সম্ভব হলে রাশিয়া নিজেই এটি এড়িয়ে চলতে আগ্রহী বলেও মন্তব্য রুশ প্রেসিডেন্টের।

ট্রাম্প আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে রাশিয়া তাদের ইউরোপীয় ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসাতে পারবে; যার ফলে ইউরোপের বিরাট অংশ মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চলে আসবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত অন্য আরেকটি অস্ত্র চুক্তি ‘দ্য নিউ স্টার্ট প্যাক্ট’ এর ভাগ্য নিয়েও সন্দিহান পুতিন। কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হওয়া চুক্তিটির মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত।

এসব কারণে বিশ্বে নতুন করে ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ শুরু হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

‘যদি এগুলো (চুক্তি) সবই বাতিল হয়ে যায়, তাহলে অস্ত্র বৃদ্ধির লাগাম টানার মতো আর কিছুই থাকবে না। আমার দৃষ্টিতে তখনকার পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ বিপজ্জনক।

সব বাদ রেখে শুরু হবে কেবল অস্ত্র প্রতিযোগিতা,’ বলেছেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close