আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

বাণিজ্যযুদ্ধ : ২০০৯ সালের পর চীনের সর্বনিম্ন জিডিপি প্রবৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিক্ত বাণিজ্যের যুদ্ধে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চীনের অর্থনীতিতে। এই বছরের তৃতীয় কোয়ার্টার অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই চীনের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল অবস্থা। আর ২০০৯ সালের প্রথম তিন মাসের পরই এখনই দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

চীনা বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়ে গত জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কিছু চীনা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর কর আরোপ করে। সব মিলিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শুল্কারোপ করেছে। এই নতুন শুল্কারোপ এমন সময় কার্যকর হচ্ছে যখন দুই দেশ সংকট নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই বাণিজ্যযুদ্ধে এসব আলোচনা খুব বেশি কাজে আসছে না।

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের মালিকানা, শিল্পে ভর্তুকি ও বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তন আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর চাপ দেওয়া শুরু করার পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমতে শুরু করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতি ঠেকাতে ইতোমধ্যে কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে দেশটি। বাণিজ্য খাতে সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি মার্কিন শুল্ক আরোপের ঝুঁকি বিষয়ে নিজেদের প্রচারণায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। মার্কিন বর্ধিত শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হলেও তেমন ঝুঁকি থাকবে না বলে এত দিন বলে আসছিল দেশটি। এখন তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকে চীনের প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় তা ঠেকাতে আরো সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

৬৮ জন অর্থনীতিবিদের মতামত নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের করা এক জরিপে দেখা গেছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৬ শতাংশ। আগের তিন মাসে তা ছিল ৬.৭ শতাংশ। ফলে ২০০৯ সালের প্রথম তিন মাসের পর আবারও এত কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন। তবে বছরের তৃতীয় ভাগের এই প্রবৃদ্ধিতেও সরকারের পুরো বছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ এর চেয়ে বেশিই থাকবে।

সাংহাইয়ের ব্যাংক অব কমিউনিকেশন’র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ টাঙ জিয়ানবিউ বলেন, ‘ব্যয় সংকোচন ও অবকাঠামো বিনিয়োগ এখনো স্থিতিশীল না হলেও তুলনামূলকভাবে অর্থনীতির ওপর চাপ কমানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘বাহ্যিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নীতির সমন্বয় করা জরুরি।’

এক অনানুষ্ঠানিক জরিপে দেখা গেছে, ১৫ মাস ধরে সম্প্রসারণের পর চীনের বিশাল উৎপাদন খাত সেপ্টেম্বরে থেমে গেছে। কারণ আমদানির চাহিদাও গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পর্যায়ে রয়েছে। একটি আনুষ্ঠানিক জরিপেও চীনের কারখানাগুলোর উৎপাদন কমার কথা জানানো হয়েছে। আরেকটি বিষয় দেখা গেছে যে, পূর্বেকার সুবিধা ভোগ করতে মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে কোম্পানিগুলো তাদের রফতানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে সেপ্টেম্বরে চীনের রফতানিতে অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দামও এই বছর ৬ শতাংশ কমেছে। এটার পেছনেও মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে বলে রয়টার্সের জরিপে উঠে এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close