আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১২ অক্টোবর, ২০১৮

‘দানবীয়’ মাইকেলে লণ্ডভণ্ড ফ্লোরিডা

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উত্তর-পশ্চিমে তা-বলীলা চালিয়েছে ‘দানবীয়’ ঘূর্ণিঝড় মাইকেল। চার মাত্রার এ হারিকেনের আঘাতে সমুদ্রতীরবর্তী শহরগুলোতে তাৎক্ষণিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বিবিসি এ কথা জানায়।

বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে এটি আলাবামা ও জর্জিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার নাগাদ এটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)। ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পড়ে ফ্লোরিডায় একজনের মৃত্যুর খবরও জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।

যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ধেয়ে যাওয়ার পথে মাইকেলের দ্রুত শক্তি অর্জন আবহাওয়াবিদদেরও বিস্মিত করেছে। রোববার ক্রান্তীয় নিম্নচাপ হিসেবে যাত্রা শুরু করা ঝড়টি মঙ্গলবারই দুই মাত্রার হারিকেনে পরিণত হয়। বুধবার ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল গতির বাতাস নিয়ে আঘাত হানার সময় এর মাত্রা ছিল পাঁচের প্রায় কাছাকাছি। ফ্লোরিডায় আঘাত হানার আগে এটি মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঘূর্ণিঝড়টির তা-বে নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও এলসালভাদরে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

মাইকেলের নিয়ে আসা তীব্র বাতাসে গাছ উপড়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকার প্রায় আড়াই লাখ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি কার্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে ফ্লোরিডার ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হলেও অনেকেই সেই নির্দেশ না মানায় মাইকেল আঘাত হানার আগেই উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। ১৯৬৯ সালে মিসিসিপি ও ১৯৩৫ সালে লেবার ডে-তে ফ্লোরিডায় আছড়ে পড়া ঝড়ের পর মাইকেলকেই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রেকর্ড অনুযায়ী, এর আগে ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলে চার মাত্রার কোনো ঝড় আঘাত হানেনি বলে জানিয়েছেন এনএইচসির আবহাওয়াবিদ ডেনিস ফেল্টজেন।

মাইকেলের তীব্র বাতাস ২০০১ এর আগের নির্মিত বাড়িগুলোর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন মার্কিন কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার পরিচালক ব্রুক লং। ‘ওই স্থাপনাগুলো টিকে থাকে যেন, সেটিই আমাদের আশা। আর যদি টিকে থাকতে না পারে, তাহলে সেগুলোতে যেন কোনো লোকজন না থাকে,’ প্রতিক্রিয়ায় বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ফ্লোরিডার মেক্সিকো বিচের কাছে বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার দিকে হারিকেনটি আঘাত হানে বলে জানায় এনএইচসি। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগেই ফ্লোরিডা, আলাবামা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফ্লোরিডার কিছু কিছু অংশে ১৪ ফুট পর্যন্ত ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে এবং ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কারণে তাৎক্ষণিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। বুধবার রাতের দিকে ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাতাসের গতি নেমে যায় ঘণ্টায় ৯০ মাইলে। ‘যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকাগুলো অতিক্রমের সময় ঝড়টি আরো দুর্বল হয়ে গতকাল সকালের দিকে এটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হতে পারে। গতকাল রাতের দিকে ফের শক্তি অর্জন করে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে শুক্রবার এটি পূর্ব উপকূল ছেড়ে যেতে পারে,’ জানায় এনএইচসি।

ঝড় মোকাবেলায় ন্যাশনাল গার্ডের আড়াই হাজার সদস্যকে মোতায়েন করার কথা আগের দিনই জানিয়েছিলেন ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট।

১০০ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হতে পারে শঙ্কার কথা জানিয়ে এর ‘অকল্পনীয় ক্ষয়ক্ষতির’ ব্যাপারে অগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন তিনি। আলাবামায় টর্নেডোও আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের। গত মাসে হারিকেন ফ্লোরেন্সে ভেসে যাওয়া ক্যারোলাইনাতেও ঝরাতে পারে তুমুল বৃষ্টি। মাইকেলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল রেখা বরাবর ৩০০ মাইলের বেশি এলাকা ঝুঁকির মুখে আছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close