আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০২ অক্টোবর, ২০১৮

রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীন-মিয়ানমার সমঝোতা

রাখাইন অঞ্চলের বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপনে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে মিয়ানমার। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ও এসইজেড কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উ থান মিন্টকে উদ্ধৃত করে সোমবার দ্য মিয়ানমার টাইমস এ খবর দিয়েছে।

উ থান বলেন, রাখাইনে কায়ুকফায়ু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে রূপরেখা চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে মিয়ানমার ও চীন। এ বছরের শেষ দিকে ওই চুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আওতায় চীন এসইজেড অঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গভীর সমুদ্রবন্দরের ৭০ শতাংশের মালিক হবে চীন। বাকি ৩০ শতাংশ মিয়ানমার সরকার ও স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকবে। নতুন সমঝোতা অনুযায়ী, মিয়ানমারের অর্থনৈতিক বোঝা কমাতেও চীন সহায়তা করবে। চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত ও রূপরেখা চুক্তি সই হওয়ার বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

প্রাথমিক চুক্তিতে ওই বন্দরের ৮৫ শতাংশ মালিকানা চেয়েছিল চীন ছিল। কিন্তু মিয়ানমারের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়। প্রায় ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ওই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সিআইটিআইসি গ্রুপের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম। নতুন মালিকানা কাঠামো ও বন্দর নির্মাণে রূপরেখা চুক্তির খসড়া গত অগাস্টে এসইজেড কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমে যেখান কায়ুকফায়ু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) হবে সেখান থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে গতব ছর রোহিঙ্গা নিধন অভিযানে নেমেছিল দেশটির সেনাবাহিনী। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে শিল্প ও অবকাঠামো তৈরির জন্য ১ হাজার ৭০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে এই শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তিনটি বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে চীনের স্বার্থ জড়িত।

গভীর সমুদ্রবন্দর কায়ুকফায়ুর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে এই গভীর সমুদ্রবন্দর। অঞ্চলটিতে ছোট আকারের একটি বন্দর রয়েছে, যা দেশীয় পণ্য রফতানিতে ব্যবহার করা হয়। গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে পুনর্নির্মিত হলে এর বার্ষিক ক্ষমতা দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন টিইইউ। এই বন্দরটি চীনের বেল্প অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সামুদ্রিক অবকাঠামোর জন্য কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, পাকিস্তানের গোয়াদর ও শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে।

বন্দরটি পশ্চিমা দেশ থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য চীনের বিকল্প রুট হিসেবে কাজ করবে। এখন চীনকে তেল আমদানি করতে হয় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্র পথ মালাকা প্রণালি দিয়ে। বন্দরটি হলে এই প্রণালি এড়িয়ে যেতে পারবে চীন।

তেল-গ্যাসের পাইপলাইন

থেলং মিয়ানমার-চীনা তেল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প বলে পরিচিত এই প্রকল্পটি ২ কোটি ৪৫ লাখ ডলারে নির্মিত হচ্ছে। রাখাইনের উপকূল থেকে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশে পর্যন্ত ৭৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে।

পাইপলাইনটির ৫১ শতাংশ মালিকানা চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এবং মিয়ানমারের অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের ৪৯ শতাংশ। এই পাইপলাইন দিয়ে ২২ মিলিয়ন টন তেল পরিবহন করা হবে। বর্তমানে ১৩ মিলিয়ন টন তেল পরিবহন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১২ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসও বহন করা হবে এই পাইপলাইন দিয়ে।

এসব তেল আমদানি করা হয় আরব দেশ থেকে। বঙ্গোপসাগর হয়ে জাহাজে এসব তেল-গ্যাস এসে পৌঁছায় কায়ুকফায়ুতে। শিল্পাঞ্চল ২৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য শিল্পাঞ্চল প্রকল্পের কাজ ২০-৩০ বছরের মধ্যে শেষ হতে পারে। ১০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে শিল্পাঞ্চলটি গঠিত হচ্ছে। প্রথম ধাপে কৃষি, ইকোট্যুরিজম এবং শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close