আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পাকিস্তানে ইমরানের গাড়ি বিক্রির নিলাম ফ্লপ

খরচ কমাতে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের অধিকাংশ গাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেগুলো নিলামে তুললেও কাক্সিক্ষত সাড়া পাননি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের লনে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। নিলাম নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা হলেও বিক্রি আশানুরূপ ছিল না। বরং নিলাম কখনো কখনো ক্রেতাদের হাসির খোরাক হয়েছে।

নিলাম থেকে সরকার অন্তত এক কোটি ৬০ লাখ ডলার আয়ের আশা করলেও গাড়ি বিক্রি থেকে কোষাগারে মাত্র ৬ লাখ ডলার ঢুকেছে। ‘কৃচ্ছতার পথে’ নিলামে অংশ নেওয়া ক্রেতাদের চোখ ছিল বুলেটপ্রুফ জিপ ও হেলিকপ্টারে। বেশি আগ্রহ ছিল বিক্রির তালিকায় থাকা চারটি সরকারি হেলিকপ্টার নিয়ে। কিন্তু পরে এ হেলিকপ্টারগুলোর নিলাম চলতি মাসের শেষের দিকে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিক্রির জন্য রাখা শতাধিক গাড়ির অর্ধেকেরও বেশি ‘বিলাসবহুল’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬২টি গাড়ি নিয়ে নিলামের হাতুড়ি ঠোকাঠুকি হয়। এর মধ্যে আগ্রহের চূড়ায় ছিল ২০১৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের আমলে কেনা দুটি মার্সিডিজ মায়বাস এস-৬০০। নিলামকারীরা প্রত্যেকটি গাড়ির প্রাথমিক দর হিসেবে ১৩ লাখ ডলার চাওয়া হলে উপস্থিত প্রায় ৫০০ ক্রেতা সশব্দে হেসে ওঠে; শেষ পর্যন্ত কেউই ওই গাড়িগুলোর একটিও নেয়নি।

সাতটি বিএমডব্লিউর পাশাপাশি অবিক্রিত থাকে ১৯৯৩ সালের ১৪টি মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-৩০০ ও। নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি গাড়িটি হল বুলেট-প্রুফ ২০১৫ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার; এটি প্রায় দুই লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা পেয়েছে চারটি বুলেট-প্রুফ ২০০৫ মার্সিডিজ জিপও। ঋণ সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকার এ ধরনের আরো নিলাম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জুলাইয়ের নির্বাচনে জয়ী হয় ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পাকিস্তানজুড়ে কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচির ডাক দেন ইমরান। তবে ‘এ কর্মসূচি যতটা না সরকারি ব্যয় কমানোর, তার চেয়ে বেশি লোক দেখানোর’ বলে ব্যঙ্গ করছেন সমালোচকরা। অন্যদেরকে ব্যয় কাঁটছাঁট করতে বলে যানজট এড়াতে নিজে হেলিকপ্টারে ব্যবহার করে গত মাসে তাদের কঠোর সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন ইমরান।

সমালোচকরা বলছেন, সরকারি গাড়ি নিলামের চল নতুন নয়, এটা সবসময়ই হয়; ইমরানের তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকার তাদের ‘কৃচ্ছ্রতা’র কর্মসূচির প্রচারে একে বাড়িয়ে দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। বিক্রির জন্য রাখা অনেক গাড়িই ‘বিলাসবহুল নয়’, কোনো কোনোটি কেনা হয়েছে গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি, বলছে বিবিসি। অনেক ক্রেতা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ডাকা নিলামে অংশ নিতে পেরেই খুশি। এদেরই একজন রাওয়ালপিন্ডির আফজাল। নিলাম থেকে দুটো গাড়ি কিনেছেন তিনি, যার একটির দাম পড়েছে মাত্র চার হাজার ডলার। স্থানীয়ভাবে মেহরান নামে পরিচিত ২০০৫ এর সুজুকি হাচব্যাকই ছিল সোমবারের নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে সস্তা গাড়ি। ছেলের জন্য গাড়িটি কিনতে বাজারের চেয়ে অতিরিক্ত দাম দিতেও আপত্তি করেননি আফজাল।

‘সব শেষে, এই অর্থ তো আমাদের জাতীয় রাজস্বেই ফেরত যাচ্ছে; এবং এটাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন,” বিবিসিকে বলেন এ গাড়ি ক্রেতা।

অতিরিক্ত বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারি ভবনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, ভিআইপিদের নিরাপত্তায় খরচ কমানো এবং সরকারি কার্যালয় থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা আছে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ইমরান এমনকী প্রবাসী নাগরিকদের প্রতি প্রত্যেককে সরকারি তহবিলে অন্তত এক হাজার ডলার করে অনুদান দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নেসার উত্তর-পশ্চিমে একটি বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ওই তহবিলটির উদ্বোধন করেছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close