আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ব্রাজিলে ছুরিকাহত বোলসোনারো শঙ্কামুক্ত, ‘ফিরছেন না’ প্রচারে
নির্বাচনী প্রচারে ছুরিকাহত ব্রাজিলের ডানপন্থী রাজনীতিক জাইর বোলসোনারোর শরীর থেকে ৪০ শতাংশ রক্ত ঝরেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এ প্রার্থী বৃহস্পতিবার মিনাস জেরাইসে প্রচার চালানোর সময় হামলার শিকার হন। চিকিৎসকরা বলছেন, হামলাকারীর ছুরি ৬৩ বছর বয়সী এ রাজনীতিকের অন্ত্রের গভীরে পৌঁছে যাওয়ায় তার বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর এখন তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত।
আহত বোলসোনারো নির্বাচনের আগে আর প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না বলেও তার ছেলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, জানিয়েছে বিবিসি। ‘বাবা এখনো দুর্বল, কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে’ বলেছেন ফ্লাভিও। তিনি রাস্তায় যেতে পারবেন না, কিন্তু আমরা পারব।
কট্টর ডানপন্থী দল সোশ্যাল লিবারেল পার্টির (পিএসএল) নেতা বোলসোনারো বর্ণবাদী ও বিতর্কিত নানা বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হলেও সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে তার অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছিল।
দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বামপন্থী লুলা দ্য সিলভা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে অক্টোবরের নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে বোলসোনারোই শীর্ষস্থান পেতে যাচ্ছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। দ্বিতীয় দফার ভোটে অবশ্য তার পরাজয়ের সম্ভাবনাই বেশি।
ছুরিকাহত হওয়ায় কট্টর ডানপন্থী এ রাজনীতিকের জনসমর্থন বেড়ে যেতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
বোলসোনারো যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেখানকার পরিচালক ইউনিস দান্তাস শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, ডানপন্থী এ রাজনীতিক যখন হাসপাতালে আসেন ততক্ষণে তার শরীর থেকে দুই লিটারেরও বেশি রক্ত ঝরে গেছে। পিএসএল নেতা সেসময় মানসিকভাবেও ভয়ানক বিপর্যস্ত ছিলেন। চিকিৎসার পর তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও অন্তত সপ্তাহখানেক তাকে হাসপাতালে কাটাতে হবে, বলেছেন এ নারী পরিচালক।
হামলাকারীর ছুরি বোলসোনারোর পেটে ১২ সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে বলে তার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। ডানপন্থী এ রাজনীতিককে এখন সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে হাসপাতালের বিছানা থেকে বোলসোনারোকে ঈশ্বর ও চিকিৎসক দলকে ধন্যবাদ দিতে দেখা গেছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় তার থাম্বস আপের একটি ছবিও টুইটারে দিয়েছেন ফ্লাভিও।
হামলার ঘটনায় পুলিশ ৪০ বছর বয়সী আদেলিও ওবিসপো দে অলিভেইরা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের আগে বোলসোনারোর সমর্থকরা তাকে প্রচ- মারধর করেছে। আদেলিও ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বোলসোনারোর ওপর হামলার ঘটনায় ব্রাজিলের অন্যান্য দল থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
লুলার ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফার্নান্দো হাদ্দাদ এ হামলাকে ‘উদ্ভট ও দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আদালতের আদেশে লুলা শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারলে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে হাদ্দাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন।
রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় প্রেসিডেন্ট মিচেল তেমের বলেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের হামলা অগ্রহণযোগ্য। আশা করি বোলসোনারো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
‘হামলায় জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করে এমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যা মানুষের সামনে উদাহরণ হয়ে থাকবে। যাতে আর কোনো প্রার্থীর ওপর হামলা না হয়,’ বলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক সেনা কর্মকর্তা বোলসোনারোর কোটি কোটি অনুসারী আছে।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন শিথিলের পক্ষে থাকা কট্টর ডানপন্থী এ রাজনীতিক বিভিন্ন বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য অতীতেও দারুণ সমালোচিত হয়েছিলেন। তাকে অনেকেই ‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’ বলে ডাকেন।
"