আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে পারেন সৌদি বাদশাহর ভাই

বাদশাহ ও যুবরাজের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে এখন স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার কথা ভাবছেন সৌদি বাদশাহর ভাই ও রাজপুত্র আহমেদ বিন আবদুল আজিজ। চলতি সপ্তাহের শুরুতে লন্ডনে নিজ বাড়ির বাইরে জড়ো হওয়া ইয়েমেন ও বাহরাইনের বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে রাখা বক্তব্যে সৌদি ক্ষমতার দুই শীর্ষ ব্যক্তির সমালোচনা করেন তিনি। এর জেরে সৌদি রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের গুঞ্জন শুরু হলে সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ব বার্তা সংস্থা আহমেদের নামে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। ওই বিবৃতিতে রাজপরিবারে বিরোধের গুঞ্জন অস্বীকার করা হয়। তবে রাজপুত্র আহমেদের ঘনিষ্ঠ এক ঊর্ধ্বতন সূত্রের বরাত দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ব বার্তা সংস্থা ভুয়া বিবৃতি প্রকাশ করেছে আর নিজের বক্তব্যে অনড় রয়েছেন আহমেদ বিন আবদুল আজিজ। ইয়েমেনের তিন বছরের যুদ্ধে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্টতার বিরুদ্ধে লন্ডনে সম্প্রতি বিক্ষোভ করে ইয়েমেন ও বাহরাইনের বিক্ষোভকারীরা। আহমেদ বিন আবদুল আজিজের বাড়ির বাইরে অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীরা আল সৌদ পরিবারকে অপরাধী হিসেবে বর্ণনা করে স্লোগান দিতে থাকেন। ওই বিক্ষোভের ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় স্লোগানরত বিক্ষোভকারীদের থামার আহ্বান জানিয়ে আহমেদ বলেন আল সৌদ পরিবারকে নিয়ে এসব বলছেন কেন? ‘এর সঙ্গে পুরো রাজপরিবারের যোগসূত্র কী? নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি এজন্য দায়ী... বাদশাহ আর যুবরাজ। অন্য কাউকে এর সঙ্গে জড়াবেন না’।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে রাষ্ট্রায়ত্ব সৌদি বার্তা সংস্থা আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে উদ্ধৃত করে খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে বলা হয়, রাজপুত্র বাদশাহকে সমালোচনা করেছেন বলে যেসব বর্ণনা করা হচ্ছে তা ‘ভুল’। রাজপুত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই খবরে বলা হয়, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাদশাহ ও যুবরাজ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী। এটা দেশের ও জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সত্য। সে কারণে আমি যা বলেছি তাকে ভিন্ন খাতে নেওয়া সম্ভব নয়’। তবে আহমেদ বিন আবদুল আজিজের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি দাবি করেছে, নিজের বক্তব্যে অটল রয়েছেন তিনি। সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ব বার্তা সংস্থায় প্রচারিত বিবৃতিকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে বলা হয় ওই খবরে রাজপুত্রের নামে যে উদ্ধৃতি প্রকাশ হয়েছে তিনি সেসব মন্তব্য করেননি। এই পরিস্থিতিতে নিজ দেশে না ফেরার বিষয়টি আহমেদ বিন আবদুল আজিজ বিবেচনা করছেন বলে জানায় ওই সূত্রটি।

বিক্ষোভের ভিডিও ছড়িয়ে পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবি একটি হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়েছে। ওই হ্যাশট্যাগে বলা হচ্ছে, ‘বাদশাহ হিসেবে আহমেদ আবদুল আজিজের প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি’।

আহমেদ বিন আবদুল আজিজের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো আল সৌদ পরিবারের রাজপুত্রদের মধ্যকার ক্রমপর্যায় ও বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নীরবতার নীতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটল। যদি একবার রাজপুত্র আহমেদ তার দেশে না ফেরার সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন তাহলে তার কার্যকলাপ বাদশাহ সালমানের রাজত্বের ওপর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।

এদিকে সৌদি আরবের বিভিন্ন ইস্যুতে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে বিরোধের খবরও সামনে এসেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম আল খালিজের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মিডলইস্ট মনিটর জানিয়েছে, যুবরাজের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়ে বাদশাহ সালমানই সৌদি তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। তাছাড়া ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুবরাজ সালমানের মার্কিন পক্ষপাতের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিয়েছেন বাদশাহ সালমান। এমন পরিস্থিতি রাজপরিবারের ঐক্য অটুট থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close