আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

জেরুজালেমে দূতাবাস রাখতে প্যারাগুয়ের ওপর মার্কিন চাপ

প্যারাগুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট মারিও আবদোকে পূর্বসূরি হোরাসিও কারটেসের সিদ্ধান্তে অটল থেকে দেশটির ইসরায়েলি দূতাবাস জেরুজালেমেই রাখতে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্যারাগুয়ে তাদের দূতাবাস ফের তেল আবিবে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বুধবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার চাপ দেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। দ্ইু প্রেসিডেন্টের এ টেলিফোন আলাপের বিষয়টি বৃহস্পতিবার জানায় পেন্সের কার্যালয়।

পুরো জেরুজালেমকেই নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে ইসরায়েল। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরাও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে প্রস্তাব করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পুরো জেরুজালেমে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়নি। তবে এ বছর যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইসরায়েলি দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে এলে প্রসঙ্গটি নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। ওয়াশিংটনের পরপরই গুয়াতেমালা ও প্যারাগুয়ে তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের কথা জানায়।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের সরকারকে খুশি করলেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে এমনকী মিত্ররাও ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। দশকের পর দশক ধরে জেরুজালেম বিষয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, নতুন মার্কিন প্রশাসন তা বদলে ফেলায় নিজের দেশের ভেতরেও শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতিতে এ বদলের পেছনে পেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলেই ধারণা পশ্চিমা গণমাধ্যমের। জুলাই পর্যন্ত জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করলেও অগাস্টের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বদলালে আসুনসিওনের সুরেও পরিবর্তন দেখা যায়। আবদো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গত সপ্তাহে প্যারাগুয়ে ইসরায়েলে তাদের দূতাবাস ফের আগের শহরে নিয়ে আসার ঘোষণা দেয়। টেলিফোনে পেন্স প্যারাগুয়ের নতুন প্রেসিডেন্টকে জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা ঐতিহাসিক সম্পর্কের নিদর্শন বজায় রাখতে দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত’ করেছেন বলে তার দপ্তরের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

পেন্সের দফতর জানায়, আলোচনায় আবদো ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন; দুই নেতা ইসরায়েল-ফলিস্তিন সংঘাত নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি ও বিস্তৃত শান্তির জন্য কাজ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছেন। জেরুজালেমে দূতাবাস রাখার ব্যাপারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের অনুরোধের উত্তরে আবদো কী বলেছেন বিবৃতিতে সে সম্বন্ধে কিছু জানানো হয়নি। যদিও বুধবার দূতাবাস ফের তেল আবিবে সরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা বলার সময় প্যারাগুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্তকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে ‘বড় আকারের, দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর শান্তি প্রচেষ্টার’ অংশ হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও গুয়াতেমালা তাদের দূতাবাস স্থানান্তরের পরদিন ২১ হোরাসিও কারটেস জেরুজালেমে প্যারাগুয়ের নতুন দূতাবাস উদ্বোধন করেছিলেন।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি দূতাবাস নিয়ে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্যারাগুয়ের ইসরায়েলি দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ দেন। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে দশককালের নীতি বদলে ট্রাম্প চলতি বছর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানেই মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে আনেন। ইহুদি, মুসলমান ও খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত এ শহরের স্বীকৃতিই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই পক্ষের বিরোধ ও অবিশ্বাস দূর না করে জেরুজালেমে কেবল ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close