আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ আগস্ট, ২০১৮

মালয়েশিয়াতে বাতিল হলো ভুয়া খবর সংক্রান্ত আইন

ভুয়া খবর ছড়ানোর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে পাস হওয়া আইনটি বিলুপ্ত করেছে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। যেসব দেশে ভিন্ন মত দমনের এরকম আইন চালু আছে তাদের মধ্যে মালয়েশিয়াই প্রথম দেশ যা এমন আইন বাতিল করল। মালয়েশিয়ার সংসদে ৩ ঘণ্টা বিতর্কের পর আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। ভুয়া খবর ঠেকানোর দরকার হলে তার জন্য পুলিশকে অন্য কোনো ক্ষমতা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী হানিপা মেইদিন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, শুধু ভুয়া খবরের দোহাই দিয়ে বানানো আইনটিই নয়, রাষ্ট্রদ্রোহের দোহাই দিয়ে বানানো আইনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে মালয়েশিয়াতে।

নাজিব রাজাকের নেতৃত্বাধীন সরকার এ বছরের মার্চ মাসে আইনটি পাস করেছিল। এতে ভুয়া খবর ছড়ানোর দায়ে সর্বোচ্চ ছয় বছরের কারাদ- ও পাঁচ লাখ রিঙ্গিত জরিমানার বিধান ছিল। ভুয়া খবরের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, ‘সংবাদ, তথ্য এবং প্রতিবেদন যা সম্পূর্ণ বা আংশিক অসত্য’ তাকে ভুয়া খবর হিসেব বিবেচনা করা হবে। আর দোষী ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করতে লেখা হয়েছিল, ‘যেকোনো মাধ্যমে জ্ঞাতসারে ভুয়া খবর তৈরি করা, দেওয়ার প্রস্তাব করা, প্রকাশ করা, মুদ্রণ করা, বিতরণ করা, ছড়ানো ও ভুয়া খবর ছড়ানোতে জড়িত থাকা কোনো প্রকাশনা প্রচার করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি’ দোষী হিসেবে বিবেচিত হবেন। নাজিব রাজাকের সরকার এই আইন এমন এক পরিস্থিতিতে করেছিল যখন দেশটিতে ওয়ানএমডিবি ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতি নিয়ে দেশটিতে প্রবল সমালোচনা চলছিল। এখন নাজিব নিজেই দুর্নীতির দায়ে বিচারাধীন। গার্ডিয়ান লিখেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ১২৫ বছরের কারাদ- হতে পারে।

ওই আইনের প্রথম বলি হতে চলেছিলেন স্বয়ং মাহাথির মোহাম্মদ। নির্বাচনের আগে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, নাজিব রাজাকের সরকারে কর্মরত ব্যক্তিরা তার বিমানে নাশকতা করার চেষ্টা করেছিল। তাতেই তার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর সংক্রান্ত নতুন আইনে তদন্ত শুরু করে দিয়েছিল নাজিব সরকার। এতে মাহাথিরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিল। আইনটি যখন প্রস্তাব করা হয়েছিল তখনই সমালোচকরা বলেছিলেন, মূলত বিরুদ্ধ মত দমন ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করানোর জন্যই ওই আইনটির প্রস্তাব করা হয়েছিল। নির্বাচনে বিরোধীদের প্রতিশ্রুতিগুলোরও অন্যতম একটি ছিল ভুয়া খবর সংক্রান্ত ওই আইন বাতিল করা।

বিরুদ্ধ মত ও সমালোচনা দমনে ব্যবহৃত আইনটি বাতিল করায় মাহাথির সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। ‘আশিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের’ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ব্রাওনার বাগুইলাত বলেছেন, ‘এটা এমন একটি আইন ছিল যা স্পষ্টতই কর্তৃপক্ষের সমালোচনা ও বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কের সুযোগ বন্ধ করে দিতেই পাস করা হয়েছিল।’ ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের’ (সিপিজে) এশিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক স্টিভেন বাটলার মন্তব্য করেছেন, ‘সংবাদপত্রে স্বাধীনতাকে ক্ষুণœ করা ভুয়া খবর সংক্রান্ত আইনটি বাতিল করায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়েছে। তাই সিপিজে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।’

ভুয়া খবরের আইনটি ছাড়াও মালয়েশিয়াতে এখনো রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত ভয়ঙ্কর আইন রয়েছে। নাজিব রাজাকের আমলে এই আইন অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়েও মালয়েশিয়াতে পরিবর্তনের লক্ষণ দেখতে পেয়েছে গার্ডিয়ান। নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী রোসমাহ মানসুরের কার্টুন আকার কারণে ৯টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন কার্টুনিস্ট জুনার। মাহাথির সরকার তার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর জুনারের কার্টুনের বইটিও প্রায় এক যুগ পরে আবার বিক্রি হতে শুরু করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close