আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২১ জুলাই, ২০১৮

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মুক্তিপণ দিয়েছে কাতার!

কাতারের ২৮ জন নাগরিক ইরাকে অপহৃত হওয়া ও তাদের মুক্তি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, কাতার কি তাদের মুক্ত করতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়েছিল? সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতে পৌঁছানো কথোপকথনের বর্ণনায় উঠে এসেছে অপহরণের ওই ঘটনার আদ্যোপান্ত। বিবিসি উল্লেখ করেছে, অপহরণকারীরা ইরানসংশ্লিষ্ট শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যারা সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত। যে বৈরী দেশ কাতারের এসব ফোনকলের রেকর্ড ফাঁস করেছে তারা প্রমাণ করতে চায়, কাতার সন্ত্রাসীদের অর্থায়নে কাজ করেছে। অন্যদিকে কাতারের দাবি, তারা ইরাক সরকারকে অর্থ দিয়েছে। তার পরও বৈরী দেশটি দাবি করেছে, ইরাক আসলে ওই অর্থ বণ্টনের কাজ করেছে। কাতার যে আগেও অপহরণের সঙ্গে জড়িত শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে অর্থ দিয়েছিল এবং দরকষাকষির সময়ে তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল তারও বর্ণনা রয়েছে ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোনকলে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ওই মুক্তিপণের অঙ্ক কাতার পরিশোধ করেছে কি না তা প্রমাণ-অপ্রমাণের ওপর নির্ভর করছে দেশটির বিরুদ্ধে থাকা সৌদি জোটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি।

ঘটনার শুরু ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বরে। ওই দিন কাতারের কাছে খবর আসে, রাজপরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৮ জন ইরাকে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এদের অনেকে সরাসরি রাজপরিবারের সদস্য এবং অন্যরা তাদের বন্ধুবান্ধব। তারা ইরাকে গিয়েছিলেন বাজপাখি শিকার করতে। যখন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ব্যক্তি শেইখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুলরাহমান আল থানির হাতে অপহৃতদের তালিকা পৌঁছাল, তখন তিনি দেখলেন অপহৃতদের মধ্যে দুইজন তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অপহৃত এসব ব্যক্তিকে পরবর্তী ১৬ মাস জিম্মি অবস্থায় থাকতে হয়েছিল। অপহৃতদের দুইভাগে ভাগ করে রাখা হয়েছিল। এক দলে রাজপরিবারের সদস্য। আর অন্য দলে তাদের সঙ্গী যারা কাতারের রাজপরিবারের সদস্য নয়। যারা কাতারের রাজ পরিবারের সদস্য নয় তাদেরকে তুলনামূলক ভালো খাবার দেওয়া হয়েছিল এবং ভালো আচরণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে কাতারের রাজপরিবারের সদস্যদের মাটির তলার ঘরে রাখা হতো। কিছুদিন পরপর তাদের স্থান পরিবর্তন করা হতো। অপহৃতদের একজন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, প্রথমে তারা অপহরণকারীদের ইসলামিক স্টেটের সদস্য মনে করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সুন্নিদের উদ্দেশে শিয়াদের ব্যবহৃত কটুবাক্য বলতে শোনেন একজন অপহরণকারীকে।

অপহৃতদের উদ্ধারে শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুলরাহমান আল থানি ইরাকে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।

তাদের ওই আলোচনার বর্ণনাই পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায়। কাতারের প্রতি বৈরী যে দেশটি ওই আলোচনার বিস্তারিত ফাঁস করেছে তাদের ভাষ্য, অপহৃতদের উদ্ধারে কাতার ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিশোধ করেছে। আর এই অর্থ লেনদেনে জড়িত ছিলেনÑ এমন সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী যারা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী। এদের একটি ইরাকের কাতাইব হেজবুল্লাহ। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি রাস্তায় বোমা পুঁতে রেখে মার্কিন সেনা হত্যা করেছিল।

তাদের সঙ্গে অপহরণের ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের জেনারেল কাশেম সোলেইমানি। ব্যক্তিগতভাবে তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অপহরণের ঘটনা সমাধানের প্রক্রিয়ায় আসে আরেকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম: হায়াৎ তাহরির আল শাম। এই গোষ্ঠীটি সিরিয়াতে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার শাখা হিসেবে কাজ করত। তখন তাদের নাম ছিল আল নুসরা ফ্রন্ট।

কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুল রাহমান আল থানি অপহরণের ঘটনা ঘটার পর বেশ কয়েক মাস অপহৃতদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কাতারা নিশ্চিত হয়, অপহরণকারীরা ইরান সমর্থিত কাতাইব হেজবুল্লাহ (আল্লাহর ব্রিগেডের দল) নামে পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য। তারা কাতারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে।

সে সময় ইরাকে নিযুক্ত কাতরের রাষ্ট্রদূত জায়েদ আল খায়ারিন তত দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে যাওয়া শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুল রাহমান আল থানিকে জানান: আমি তাদেরকে বলেছি, ১৪ জনকে ফেরত দিলে আমরা অর্ধেক অর্থ দিয়ে দেব। বিবিসি জানিয়েছে অর্থের পরিমাণ কত, তা সেখান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist