আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৮ জুলাই, ২০১৮

টিকে থাকার লড়াইয়ে জিতে গেলেন আসাদ

দামেস্কে এলে মনে হয় না সিরিয়ায় যুদ্ধ চলছে। দামেস্কের কেন্দ্রে গত ৭ বছরের যুদ্ধের কোনো আঁচড়ই যেন লাগেনি। অথচ এই দামেস্করই অনেক উপশহর তীব্র লড়াইয়ে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু যুদ্ধের দামামা প্রতিদিনকার জীবন যাপনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিমান হামলা আর কামানের গোলা পড়ছে উপশহরগুলোতে। বিদ্রোহীরা গোলা দেগে যাচ্ছে সারাক্ষণ।

কিন্তু গত বসন্তে যখন দামেস্কের প্রান্তে পূর্ব ঘুটার পতন ঘটল, যেটি কিনা ছিল বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি, তারপর থেকে সব বদলে গেছে।

যুদ্ধের আতঙ্ক এখনো লোকজনের মনের ভেতরে গেঁথে বসে আছে। তাদের জীবন এই যুদ্ধকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। তবে বাস্তবে এই যুদ্ধ চলছে দূরে কোথাও। যেমন এখন লড়াইটা চলছে দক্ষিণাঞ্চলে, জর্ডান সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা ও গোলান মালভূমিতে। সিরিয়ার যে অঞ্চলটি কিনা ইসরায়েলের দখলে রয়েছে সেই ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় থেকে।

দামেস্কের পুরনো অংশে জীর্ণ দেয়াল ঘেরা খ্রিস্টানপাড়ার সরু অলিগলিতে মানুষের ভিড়। দোকান-রেস্তোরাঁ সব খোলা, চলছে ব্যস্ত কেনা-কাটা। বারগুলোর বড় স্ক্রিনে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার জন্য সন্ধ্যাবেলা তৈরি হচ্ছে শহরের বাসিন্দারা। বিবিসির সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েন গত মার্চ মাসে যখন সেখানে যান এক কিশোরী মেয়ের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। মেয়েটির পা বিদ্রোহীদের ছোঁড়া মর্টার শেলের আঘাতে উড়ে যায়। পূর্ব ঘুটা লক্ষ্য করে এর চেয়ে বহুগুণ ভারী গোলাবর্ষণ করা হতো যখন এর নিয়ন্ত্রণ ছিল বিদ্রোহীদের হাতে এবং বেসামরিক মানুষ যাদের সেখানে বসবাস করতে হতো তার ছিল দুর্ভাগ্যের শিকার।

এখন আনুষ্ঠানিক অনুমতি নিয়ে এবং সামরিক নিরাপত্তা বেষ্টিত হয়ে পূর্ব ঘুটা এলাকা ঘুরে দেখা যায়। যেদিকে চোখ যায়, সর্বত্রই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি এলাকার অবস্থা বেশি খারাপ। শেলের আঘাতে গুঁড়িয়ে যাওয়া অর্ধ ডজন বা তার চেয়েও বেশি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের কংক্রিট ব্লক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোথাও কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

পূর্ব ঘুটা এলাকার প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ আল ইসলাম ভূ-গর্ভস্থ বিকল্প জীবন যাপন ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তারা গোপন সুড়ঙ্গ খনন করেছে। কারিগরিভাবে তা ছিল উল্লেখযোগ্য কেননা একটি ছিটমহলের মতো বিচ্ছিন্ন জায়গার ভেতর এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। ২০১১ সাল শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে সেটি কার্যত অবরুদ্ধ হয়। কিছু কিছু টানেলের ভেতরটা মাঝারি আকারের ভ্যান চলাচলের উপযোগী। আন্ডার গ্রাউন্ডে একটি হাসপাতাল ব্যাপক গোলাবর্ষণের সময় হতাহতে মানুষদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল এবং সেটি এখনো চলছে। বিভিন্ন এলাকায় খেলতে গিয়ে মাটির নিচে পেতে রাখা বোমায় আহত হওয়া শিশুদের চিকিৎসা চলছে এখানে।

সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর দৃঢ়তা ও নির্মমতা এবং রাশিয়ার শক্তি মোকাবিলার ক্ষমতা শেষ পর্যন্ত জইশ আল ইসলামের ছিল না। গত কয়েক বছরে সিরিয়ার অধিকাংশ সশস্ত্র গোষ্ঠী বহিঃশক্তির সমর্থন হারিয়েছে। যুদ্ধের শুরুর দিকে আমেরিকা, ব্রিটেন, তুরস্ক, সৌদি আরব এবং কাতার বাশার আল আসাদকে উৎখাতে আগ্রহী বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়েছিল।

২০১৫ সালের পর সবকিছু পাল্টে যায়। যখন রাশিয়া এই যুদ্ধে দৃঢ়ভাবে হস্তক্ষেপ করে। পূর্ব ঘুটাতে যারা সুড়ঙ্গ তৈরি করে তারা ভেবেছিল যুদ্ধে জয় পেতে যাচ্ছে কিন্তু সেটা ছিল ভুল। যদিও সাময়িকভাবে সেটি মনে হয়েছিল যে তারা হয়তো সঠিক কিন্তু পূর্ব ঘোটা এবং দামেস্কের আশপাশে আরো কিছু ছোট ছোট অবরুদ্ধ এলাকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আসাদের শাসন ব্যবস্থায় আরো দৃঢ় গতি সঞ্চার করে। প্রেসিডেন্ট আসাদ এবং তার জেনারেলদের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব, সৌদি আরব এবং আরো অনেক দেশ নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধ জারি করে। তারা বিদ্রোহীদের কবল থেকে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ডেরায় লিফলেট দেখা গেছে যেখানে প্রথম প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ওই শহর থেকে বিক্ষোভের সূত্রপাত আর তার সমাধি হবে সেখানেই।

জাতিসংঘের হিসেবে এ পর্যন্ত ২৭০,০০০ বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছে যুদ্ধের কারণে। জর্ডান বা গোলান হাইটসেও তাদের আশ্রয় মিলছে না। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি তাদের জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সিরীয় সেনাবাহিনীর কৌশল এখানে পরিষ্কার। প্রচ- সামরিক হামলার পাশাপাশি তারা সমঝোতার কথা বলে। কিন্তু এটি আসলে আলোচনার মাধ্যমে আত্মসমর্পণের আরেক নাম। দীর্ঘদিন ধরে আসাদ সরকারের শাসনের বিরোধিতা করে আসা কিছু গোষ্ঠী এতে রাজি হচ্ছে। অন্যরা বলছে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া কীভাবে সম্ভব সেটা বোঝা কঠিন। এই যুদ্ধের পেছনে বড় একটি বাস্তবতা রয়েছে। আসাদ সরকার মনে করছে তারা তাদের শত্রুদের প্রায় শেষ করে দিতে পেরেছে। যদিও বড় বড় শক্তিধর দেশের বিরুদ্ধে তারা কিছু করতে পারছে না। কেননা সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় তাদের সৈন্য রয়েছে। যেমন তুরস্ক, আমেরিকা এবং তাদের মিত্রদের।

সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘাত, যুদ্ধ, দেশটির শহরগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ মানুষের জীবন বিপন্ন করে দিচ্ছে। কিন্তু আসাদ সরকারের টিকে থাকার যুদ্ধ প্রায় সম্পন্ন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist