আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৪ জুলাই, ২০১৮

‘মারা যাবে না’ এমন বিশ্বাসেই ফাঁসিতে ঝুলেছিল পরিবারটি!

দিল্লির এক পরিবারের ১১ জনের সবাইকে রহস্যজনকভাবে মৃত পাওয়ার ঘটনায় পরিবারটির এক পুরুষ সদস্য প্রধান ভূমিকা রেখেছেন এবং সবাইকে ‘গণআত্মহত্যায়’ প্ররোচিত করেছেন বলে সন্দেহ পুলিশের। রোববার সকালে দিল্লির বুরারি এলাকার ভাটিয়া পরিবারের প্রায় সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, একসঙ্গে এক পরিবারের ১১ জনের রহস্যময় মৃত্যুর এ ঘটনা ভারতজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে বলে খবর এনডিটিভির।

পুলিশ জানিয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যা থেকে ধারণা হচ্ছে তারা মারা যেতে পারেন বলে বিশ্বাস করেননি ওই পরিবারের সদস্যরা, ভগবান তাদের রক্ষা করবেনÑ এমন বিশ্বাসে অটল ছিলেন তারা।

ময়নাতদন্তের বিস্তারিত ও ওই বাড়িটি থেকে পাওয়া হাতে লেখা একগুচ্ছ নোট একসঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করে পুলিশ জানিয়েছে, ৭৭ বছর বয়সী নারায়ণ দেবীর ছেলে ললিত ভাটিয়া এই মৃত্যুর পেছনে ‘মস্তিষ্ক’ হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, নারায়ণ দেবীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জানিয়েছে তিনিও ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন। মৃতদেহগুলোর শরীরে ধস্তাধস্তির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ওই বাড়ি থেকে পুলিশের উদ্ধার করা দুটি ঢাউস নোট খাতার বিভিন্ন নোট থেকে পাওয়া ধারণায় মনে করা হচ্ছে, পরিবারটির কিছু সদস্য অন্যদের ফাঁসিতে ঝুলে পড়তে সহায়তা করেছেন।

পরিবারটির প্রায় সব সদস্যকে বাড়িটির হলওয়ের সিলিংয়ে লাগানো গ্রিলের জালিকা থেকে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সবাই বেশ কাছাকাছি ছিলেন। নোট খাতার লেখা বর্ণনার সঙ্গে তাদের যে অবস্থায় পাওয়া গেছে তা খাপ খেয়ে যায়; মুখমন্ডল প্রায় সম্পূর্ণ মোড়ানো অবস্থায় ঢাকা, টেপ লাগিয়ে মুখ বন্ধ করা এবং হাত পিছমোড়া করে বাঁধা।

খাতাগুলোর নোটে লেখা ছিল, প্রত্যেকে তাদের নিজেদের হাত বাঁধবে এবং ক্রিয়া যখন শেষ হবে হাত বাঁধন মুক্ত করতে প্রত্যেকে প্রত্যেককে সাহায্য করবে। ঘটনার তারিখটি পরিকল্পিত ছিল, এমন নজির পেয়েছে পুলিশ। নোটগুলোতে নারায়ণ দেবীকে ‘বিবি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; তার মৃতদেহের পাশে বিছানার ওপর একটি স্কার্ফ ও একটি বেল্ট পড়ে ছিল। পুলিশের সন্দেহ, তিনি মারা যাওয়ার পর কেউ একজন তার গলার ফাঁস খুলে তাকে ওভাবে রেখে দিয়েছে।

আগের দিন রাতে ওই পরিবারটি ২০টি রুটির অর্ডার দিয়েছিল। শনিবার রাত প্রায় ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রুটিগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। এর কিছু খাওয়া হয়েছিল, কিছু হয়নি। নোটগুলোতে লেখা ছিল, নারায়ণ দেবী প্রত্যেককে রুটি খাওয়াবেন। জানা গেছে, ললিত বিশ্বাস করতেন তার বাবা তাদের পুরো পরিবারকে পরিত্রাণের পথে নিয়ে যেতে চান এবং ২০১৫ সাল থেকে ওই বিষয়ে ‘নির্দেশনা’ লিখিয়ে আসছেন। ওই নোটগুলোর একটিতে লেখা আছে, আমি আগামীকাল আসব অথবা তার পরদিন। যদি আমি না আসি তবে পরে আসব। ললিতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না, যখন আমি আসি সে উত্তেজিত থাকে।

নারায়ণ দেবীর পাশাপাশি মারা যাওয়া অন্যরা হলেনÑ নারায়ণ দেবীর মেয়ে প্রতিভা (৫৭), তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা (৩৩), নারায়ণ দেবীর দুই ছেলে ভবনেশ ভাটিয়া (৫০) ও ললিত ভাটিয়া (৪৫), ভবনেশের স্ত্রী সবিতা (৪৮) এবং তাদের তিন সন্তান মিনু (২৩), নিধি (২৫) ও ধ্রুব (১৫) এবং ললিতের স্ত্রী টিনা (৪২) ও তাদের ১৫ বছর বয়সী সন্তান শিভাম। এদের মধ্যে ১৭ জুন প্রিয়ঙ্কার বাগদান হয়েছিল এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এই আত্মহত্যার ঘটনায় কোনো ‘ধর্মীয় গুরুর’ ভূমিকা অস্বীকার করেছে পুলিশ; কয়েকটি প্রতিবেদনে ধারণা প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, ওই ‘ধর্মীয় গুরুর’ কারণেই বাড়িটির সদর দরজা খোলা ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist