আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৩ জুন, ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী শিশুদের ঘিরে শতকোটি ডলারের বাণিজ্য

অবৈধ অভিবাসী সন্তানদের থাকা-খাওয়া, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আড়ালে শতকোটি ডলারের রমরমা ব্যবসা জমে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক আগে থেকেই এ কাজে জড়িয়ে থাকলেও সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণের পর রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে এ ব্যবসা।

‘সাউথওয়েস্ট কি’ নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এবং ফেডারেল কাস্টডিতে থাকা অভিবাসী শিশুদের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে ৯৫৫ মিলিয়ন ডলারের কাজ পেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির এমন একটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে দক্ষিণ টেক্সাসে। সেখানে ওয়ালমার্টের পুরনো একটি সুপারস্টোরে গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রটি। অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রের গড়ে তোলার নামে গজিয়ে ওঠা ওঠা লোভনীয় আর গোপন ব্যবসায় শুধু সাউথওয়েস্ট কি-ই নয়, অন্তত ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান শুধু টেক্সাসেই খুলে বসেছে ৩০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র। দেশটির অন্য ১৬টি রাজ্যেও আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের শ-খানেক এমন স্থাপনা রয়েছে।

দক্ষিণ টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালিতে যেভাবে অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তাতে জায়গাটিকে আশ্রয়কেন্দ্রের ঘাঁটিই বলা যায়। সেখানে পুরনো দোকান, স্কুল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয়ও গড়ে তোলা হয়েছে এসব আশ্রয়কেন্দ্র। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বড় ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলেও এগুলোর ভেতরের খবর জানে না কেউ।

সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের পর ২৩০০ শিশুকে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। শিশু এবং কিশোরদের তাদের পরিবার থেকে সরিয়ে নেওয়ার ছবি এবং তাদের তালাবন্ধ কুঠুরিতে আটকে রাখার ছবি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকাশ্যে চলে আসে এই শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার রমরমা ব্যবসার বিষয়টি।

অবৈধ অভিবাসী পরিবারগুলোকে আটক রাখতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত বুধবারের ঘোষণা মূলত বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ কোম্পানি এবং প্রতিরক্ষাসংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের আরো লাখ লাখ ডলারের কাজ পাওয়ার দ্বার খুলে দিয়েছে।

টেক্সাস এবং পেনসিলভানিয়ায় অবশ্য বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে এমন ‘ফ্যামিলি ডিটেনশন সেন্টার’ এরই মধ্যে পরিচালনা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশনার আলোকে এসব ‘বেসরকারি কারাগারে’ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, প্রযোজন আইনি ভিত্তিও।

শুধু অলাভজনক প্রতিষ্ঠানই নয়, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছে। অভিভাবক কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য ছাড়া যেসব অভিবাসী তরুণ আমেরিকায় আসে তাদের নিয়ে কাজ করে বিসিএফসি নামের একটি বৈশ্বিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের তথাকথিত ‘অভিভাবকহীন শিশু কর্মসূচির’ আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ১৭৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ক্যাথলিক চ্যারিটিজের মতো ধর্মীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও রয়েছে রয়েছে এই কর্মকা-ে।

কিন্তু প্রতিরক্ষাসংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও এসেছে এই ব্যবসায়। এদের মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি জেনারেল ডাইনামিক্স এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইরাকে নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহ করা এমভিএম ইনকরপোরেটেড।

মূলত গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিম সীমান্ত এলাকায় অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে বড় আকারে অভিযান শুরুর পর থেকেই অভিবাসী-আশ্রয়ের ব্যবসা জমে উঠতে শুরু করে।

অবশ্য, আরও আগে থেকেই, এমনকি ওবামা প্রশাসনের সময়েও বাবা-মা ছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা শিশু-কিশোরদের আশ্রয় দেওয়ার কাজটি করছে ঠিকাদাররা। সরকারের নতুন নীতির পর এর পালে হাওয়া লেগেছে। অভিবাসী পরিবারগুলো থেকে শিশুদের আলাদা করার হার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রমুখী এসব অভিবাসী এখন ডেমোক্র্যাট, অভিবাসন আইনজীবী, স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রের কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের নেতাদের স্বার্থোদ্ধারের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

সাউথওয়েস্ট কি’র প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী হুয়ান সানচেজ অনেক বছর ধরেই দক্ষিণ টেক্সারের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। অনুপ্রবেশকারীদের থাকা-খাওয়া এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে তারা নিজেদের ভালো ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু বাবা-মায়ের কাছ থেকে জোর করে বিচ্ছিন্ন করা শিশুদের সংখ্যা যেভাবে খদ্দেরদের তালিকা বড় করছে, তাতে জনগণের কাছে তাদের সুনাম ক্ষুণœই হয়েছে।

সমালোচকরা সানচেজের করের নথিপত্রও প্রকাশ করে দিয়েছে, যেখানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে তাকে ৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছে। নতুন নতুন আশ্রয়কেন্দ্র খোলা নিয়েও তার প্রতিষ্ঠান মানুষের তোপের মুখে রয়েছে। হিউস্টোনে আশ্রয়হীনদের একটি পুরনো স্থাপনাকে অভিবাসী তরুণদের আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরে সানচেজের পরিকল্পনা বাতিল করতে তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র সিলভেস্টার টার্নারসহ ডেমোক্র্যাট কর্মকর্তারা। বিষয়টি তারা রাজ্য প্রশাসনের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন।

অনেকেই বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবসা বাড়তে থাকায় অভিবাসীদের আবাসন এবং শিশু-কিশোরদের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসী তরুণদের বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে নানা ধরনের সমস্যাও দেখা দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist