আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২২ জুন, ২০১৮

প্রকৃত মালিকদের চিহ্নিত করা ‘সম্ভব হবে না’

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে থাকা আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকার নতুন ফাঁস হওয়া কিছু নথি থেকে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি যেসব অফশোর কোম্পানির স্বার্থ দেখাশোনা করত তাদের তিন-চতুর্থাংশের স্বত্বাধিকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি তারা।

প্রায় ২ বছর আগে পানামার এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া ১ কোটি ১৫ লাখ নথির মাধ্যমে সারা বিশ্বের ধনীদের ও শীর্ষ রাজনীতিকদের অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কর ফাঁকির কেলেঙ্কারির খবর জানাজানি হয়েছিল।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে থাকা কোম্পানিটি কীভাবে মক্কেলদের অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে; নিষেধাজ্ঞা এড়ানো এবং কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়া ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিয়েছিল, ফাঁস হওয়া ওই নথিগুলোতে তা স্পষ্ট হয়েছিল।

নথি ফাঁসের কথা জানার দুই মাস পর মোস্যাক ফনসেকা তাদের সহায়তা দেওয়া বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির প্রকৃত স্বত্বাধিকারী চিহ্নিত করতে জোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয় বলে নতুন ফাঁস হওয়া ১২ লাখ নথির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে জনসম্মুখে আসার আগে থেকে শুরু করে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোস্যাক ফনসেকার এসব নথিও জার্মান পত্রিকা সুচডয়েচে সাইটুংয়ের হাতে যায়। তারা এসব নথি ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের (আইসিআইজে) সঙ্গে শেয়ার করে।

নতুন এসব নথিতে দেখা গেছে, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে সক্রিয় ২৮ হাজার ৫০০ কোম্পানির মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি এবং পানামায় সক্রিয় ৭৫ শতাংশ কোম্পানির প্রকৃত মালিকানার খবর উদ্ধার করতে পারেনি এগুলোর দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকা।

ওই সময়ে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের আইনে করপোরেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্য মধ্যস্বত্বভোগী, ব্যাংক, আইনি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি অফশোর সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করার সুযোগ ছিল, যারা স্বত্বাধিকারীর পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারত। কর্তৃপক্ষ অনুরোধেই কেবল এ সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।

অফশোর বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ধনী ও ক্ষমতাবানদের কর ফাঁকির তথ্য উন্মোচিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিশন মুদ্রা পাচারবিরোধী আইন ও অন্যান্য আইনের লঙ্ঘন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ফাঁকি দেয়ার দায়ে মোস্যাক ফনসেকাকে ৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার জরিমানা করেছিল।

নতুন নথিগুলোতে দুই বছর আগে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস নিয়ে গ্রাহক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতিক্রিয়ার কিছু নমুনা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তথ্যের ঘাটতি পূরণে মোস্যাক ফনসেকার মরিয়া প্রচেষ্টা ও এসব ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়গুলোও।

দেখভাল করা কোম্পানিগুলোর প্রকৃত স্বত্বাধিকারী কারা, তা জানতে আইনি পরামর্শক এ প্রতিষ্ঠানটির করা ই-মেইলের জবাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরদাতা তার অপারগতার কথা জানান।

মোস্যাক ফনসেকার ই-মেইলের উত্তরে সুইজারল্যান্ডের এক সম্পদ ব্যবস্থাপক বলেন, গ্রাহক নিখোঁজ হয়ে গেছেন! আমি তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না!!! বেশিরভাগ উত্তরদাতার জবাবে গ্রাহকদের অফশোর ব্যবস্থাপনা বেছে নেওয়ার প্রাথমিক কারণের কথাই এসেছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।

‘এ ধরনের কাঠামোর মূল উদ্দেশ্যই ভেঙে পড়েছে, তাহলোÑ গোপনীয়তা,’ ই-মেইলের উত্তরে দেওয়া মন্তব্যে বলেন উরুগুয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক পরিকল্পনাকারী।

অন্য এক মধ্যস্বত্বভোগীর জবাব ছিলÑ আমাদের গ্রাহকদের নাম তাদের দেশগুলোর কর্তৃপক্ষরা জানে। মোস্যাককে ধন্যবাদ, গ্রাহকদের আয়কর দিতেই হচ্ছে।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি ও যুক্তরাজ্য সরকারের চাপের মুখে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন বিদেশি অঞ্চলগুলো তাদের আইনি ব্যবস্থার সুবিধা নেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রকৃত মালিকদের নথিভুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু নথিভুক্ত করার তথ্যের জন্যও মোস্যাক ফনসেকার মতো অফশোর সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপরই কর্তৃপক্ষকে নির্ভর করতে হচ্ছে।

ফাঁস হওয়া ওই কেলেঙ্কারির সূত্রে কয়েক মাসের মধ্যে পদত্যাগ করেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড ডেভিড; একই কারণে গত বছর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও ক্ষমতা ছাড়তে হয়।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে অন্য যাদের নাম এসেছিল তাদের মধ্যে আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো, ফুটবলার লিওনেল মেসি, বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই।

২০১৬ সালের শেষভাগে পানামার পুলিশ মোস্যাক ফনসেকার বিভিন্ন অফিসে হানা দেয়। নাম আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ এবং কর ফাঁকির তথ্য জানতে ৭৯টি দেশে শুরু হয় দেড়শর মতো তদন্ত কর্মকা-।

গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের কর কর্তৃপক্ষ পানামা পেপারস সংশ্লিষ্ট ৬৬টি তদন্ত চলমান বলে জানায়। এর মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া ১০০ মিলিয়ন ইউরোর সমপরিমাণ কর উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ তাদের।

পানামা কর্তৃপক্ষের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সম্মানহানির কারণে আর্থিক ক্ষতি দেখিয়ে তিন মাস আগে মোস্যাক ফনসেকা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার কথা জানায়।

চলতি মাসে দেওয়া এক বিবৃতিতে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতারা বলেছেন, তারা তাদের প্রতিষ্ঠান এবং কর্মীদের কেউই ‘বেআইনি কোনো কর্মকা-ে’ জড়িত ছিলেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist