আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সবাই খেতে পাক : ফুড এটিএম
শহরে কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। এই মহতি উদ্দেশ্য নিয়ে বিনামূল্যে খাবার বণ্টনের এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন কলকাতার এক রেস্তোরাঁ মালিক। আমেরিকায় এবং পশ্চিমের অনেক দেশেই এই খয়রাতি চালু বহু বছর ধরে, বিশেষ করে কফিশপে। ‘রিজার্ভ কফি’, বা ‘কফি অন দ্য ওয়াল’, নানা নামে ডাকা হয় এই প্রথাকে, যেখানে একজন গ্রাহক নিজের কফির দাম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি একটি কফির দাম দিয়ে যান। সেই বাড়তি কফি জমা থাকে কোনো তৃষ্ণার্ত মানুষের জন্য, যার হয়তো নিজের টাকায় এক কাপ কফি খাওয়ার সামর্থ্য নেই।
কফিশপের বাইরে বোর্ডে লেখা থাকে, এ রকম কটা নিখরচার কফি জমা আছে। পথবাসী মানুষজন, ভবঘুরেরা এসে সেই কফি খেয়ে যেতে পারেন।
ভারতের মতো দেশে সমস্যার চেহারাটা অনেক আলাদা, যেখানে বিপুল জনসংখ্যার এক বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং তাদের অনেকেই আধপেটা খেয়ে থাকেন। অভুক্ত থাকতে হয় টানা কয়েকদিন, এমন দুঃসহ পরিস্থিতিও তৈরি হয় কখনো।
অন্যদিকে দেশের জনগোষ্ঠীর এক অংশ ফেলে-ছড়িয়ে খেয়েও প্রচুর খাবার নষ্ট করে নিয়মিত। সেই অপচয় বন্ধ করে ক্ষুধার্তের মুখে দুটো খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগের শুরুটা ভারতে প্রথম হয়েছিল দক্ষিণের কোচি শহরে। সেখানে এক রেস্তোরাঁ মালিক পথের ধারে একটি ফ্রিজ রাখতে শুরু করেন, যেখানে প্রতিদিন জমা হতো উদ্বৃত্ত খাবার। গরিব মানুষ এসে সেই খাবার নিয়ে যেতে শুরু করে।
কোচির দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে মুম্বাইয়ে একই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় গুরগাঁওতে। এবার সেই একই মহৎ পরিষেবা শুরু হলো কলকাতায়। শহরের জনপ্রিয় মোগলাই খাবারের রেস্তোরাঁ ‘সানঝা চুলহা’র মালিকানার অন্যতম অংশীদার আসিফ আহমেদ। এক এক করে শহরে তিনি তিনটি ‘?ফুড এটিএম’? চালু করেছেন, যা আদতে একেকটি ৩৮০ লিটারের অতিকায় রেফ্রিজারেটর।
এ ফ্রিজগুলোর দরজা কাচের, যাতে ভেতরের খাবার দেখা যায়। সান?ঝা চুল?হার পক্ষ থেকে সোমনাথ ডয়চে ভেলেকে জানালেন, তাদের রেস্তোরাঁয় প্রতিদিনের উদ্বৃত্ত খাবার এই ফ্রিজে জমা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কেটারিংয়ের সময় যে খাবার বাঁচে, তাও ওরা চেয়ে নিয়ে আসেন। ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করে ফ্রিজে রাখা থাকে খাবার।
অভাবী, অভুক্ত মানুষ এসে চাইলে সেই খাবার তাদের দিয়ে দেওয়া হয়। রোজ এভাবেই প্রায় ১৫০ মানুষের অন্ন সংস্থান করেন ওরা। একটি অঞ্চলে ফ্রিজটি দেখভাল করা এবং খাবার বিলির ভার নিয়েছেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। এভাবে ক্রমেই সারা শহরে খাবার ছড়িয়ে দিতে চান ওরা, জানালেন সোমনাথ। যে উদ্যোগের শিরোনাম দিয়েছেন ওরা ‘হাঙ্গার ফ্রি কলকাতা’। ক্ষুধামুক্ত কলকাতা।
এর মূল মন্ত্র হলো, খাবার নষ্ট না করা। রেস্তোরাঁতে যারা খেতে আসেন, তাদের প্রত্যেককে এই কথা একবার করে বলেন ওরা।
"