আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৫ জুন, ২০১৮

এক পরিবারেই ৭ শিশু পঙ্গু

আফগানিস্তানের জালালাবাদ এলাকায় গত ২৯ এপ্রিল সকাল ৬টার দিকে বাড়ির বাইরে অদ্ভুত কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখে ভিড় জমায় মির্জা গুল পরিবারের ১১ সদস্য। এদের মধ্যে ১০ জনই শিশু। এর আগের রাতেই আশপাশের এলাকায় জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে আফগান সৈন্যদের সংঘর্ষ হয়। দুই শিশু অচেনা জিনিসটি হাতে তুলে নিলে ১৬ বছরের জলিল বুঝতে পারে যে ওটা বিপজ্জনক কিছু। এটা ছিল মূলত আগের অবিস্ফোরিত একটি রকেট। জলিল তাদের বাধা দিতে গেলে কাড়াকাড়ির একপর্যায়ে সেটি পড়ে গিয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

আফগানিস্তানে চলমান এই দীর্ঘ যুদ্ধের ইতিহাসে এটি একটি নিষ্ঠুরতম দিন। সে ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সবাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করা জলিলও ছিল। রাতে হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চার বছরের মারোয়া হারায় তার যমজ দুই বোন আর মা ব্রেখনাকে। বিস্ফোরণস্থলের পাশেই সে গোবর দিয়ে জ্বালানি বানানোর কাজ করছিল। জীবিত সাতজন, যারা এইসব শোকের ভার বইবার জন্য বেঁচেছিল। তাদের পাঁচজন হারায় একটি করে পা, আর বাকি দুজনের দুটি করে পা-ই হারাতে হয়। বিস্ফোরণ-পরবর্তী দুই দিনে নঙ্গরহর এলাকার স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা একটানা কাজ করে শিশুদের শরীরের নানা অংশের ছিন্নভিন্ন মাংসপেশি ঠিক করার চেষ্টা চালান।

অনেকের ক্ষেত্রেই শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলতে হয়, এ ছাড়া তাদের বাঁচানো সম্ভব ছিল না।

অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সায়েদ বিলাল মিখায়েল অস্ত্রোপক্ষের মূল দায়িত্বে তিনি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার অস্ত্রোপচার কক্ষেই কান্না পাচ্ছিল। এই হাসপাতালে অনেক কাটাছেঁড়ার কাজই এর আগে করা হয়েছে। কিন্তু এবারের এরা সবাই শিশু, তাও আবার একই পরিবারের সদস্য। পরিবারটি অত্যন্ত গরিব।’

এই পরিবারের বাড়িটি এমন এক সীমানায় যে এটি সরকারপক্ষ ও বিদ্রোহীপক্ষের সংঘর্ষের সময় মুখোমুখি পড়ে যায়।

জেলা পুলিশপ্রধান আবদুল রহমান খলিজে বলেন, শিশুরা যে রকেটটি নাড়াচাড়া করে এই বিস্ফোরণের শিকার হয়, সেটি মূলত সরকারপক্ষের সৈন্যদের প্রতি তালেবান যোদ্ধাদের ছোড়া একটি অবিস্ফোরিত রকেট।

এ ব্যাপারে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আবার দায়ী করেন আফগান পুলিশকে। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সংযোগ নেই, আমাদের বাড়তি রকেট বা কিছুই নেই যে আমরা ফেলে নষ্ট করতে পারি।’ দুই পক্ষের মাঝে বসবাসকারী নিরীহ এই পরিবারটি জানে না, আসলে কাকে দায়ী করতে হবে।

পরিবারটির প্রধান মির্জা গুল বলেন, ‘দিনের পর দিন এগুলো শুধু চলতেই থাকে। আমরা জানি না কাকে দোষ দেব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist