আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ৩১ মে, ২০১৮

দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের জমি হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা

দক্ষিণ আফ্রিকায় গত কিছুদিন ধরে গরিব কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন কৃষি খামারের পতিত জমি দখল করে নিতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাত্র আট শতাংশ কৃষি জমি কৃষ্ণাঙ্গদের মালিকানায়। কৃষি জমির ৯০ ভাগেরও বেশি এখনো শ্বেতাঙ্গদেরই হাতে। কাজেই সেখানে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে জমির ন্যায্য বণ্টনের দাবি জোরাল হয়ে উঠেছে এবং এ নিয়ে সরকার চাপের মুখে আছে। জোহানেসবার্গ থেকে বিবিসির এন্ড্রু হার্ডিংয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা মাশাবা এই জমির কিছু অংশ দাগ দিয়ে ভাগ করে নিয়েছেন নিজের জন্য। মাটিতে লাঠি পুঁতে এবং পতাকা লাগিয়ে একই কাজ করেছেন তার মতো আরো অনেকে। ক্রিস্টিনা কি তাহলে এই জমি তার নিজের বলে দাবি করছেন এখন? ‘হ্যাঁ। আমি আশা করছি, এখানে আমি একটা বাড়ি বানাব। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমি সরকারের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে চাই না।’ ক্রিস্টিনা এবং তার মতো আরো যারা এভাবে জমি দখল করেছেন, তারা জানেন, কাজটা বেআইনি।

ইলেকট্রিশিয়ান ইসমাইল মাতসোয়ালি স্বীকারও করলেন সেটা, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পরও যে ভূমি সংস্কার হলো না, তাতে তিনি হতাশ।

‘ছোট্ট এক টুকরো জমি। বিশাল বড় কোনো জায়গা নয়, ছোট্ট এক টুকরো জমি চাই, যাতে নিজের জন্য একটা বাড়ি বানাতে পারি। গণতন্ত্রের ২০ বছর পরও কেন এটা হলো না, তা বুঝতে পারি না। আমার কাছে এটা একটা বিরাট হতাশার কারণ।’ কিন্তু এই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কৃষি খামারে ঘণ্টাখানেক পরেই পুলিশ এসে পৌঁছাল, তারপর তৈরি হলো উত্তেজনা। ক্ষুব্ধ এক কৃষ্ণাঙ্গ বলছিলেন, এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা যাবে, এই জমির বিরোধ নিয়ে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।

এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর চাবিকাঠি যে এখনো সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের হাতে, তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। ‘দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে কালোদের দেশ। এরপর আর কোনো কথা নেই। শ্বেতাঙ্গরা এখানে বিদেশি’, বলছিলেন এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বহু বছর ধরে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অর্থনীতি ভালো হবে। ভূমি সংস্কারের কাজ দ্রুত হবে। কিন্তু এক প্রজন্ম পরে এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র আট শতাংশ কৃষি জমির মালিক হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গরা। শ্বেতাঙ্গরাই কার্যত বাকি সব কৃষি জমির মালিক।

প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা এখন ভূমি সংস্কারের গতি কীভাবে দ্রুত করা যায়, তার উপায় খুঁজছেন। তিনি নিজের দলের বামপন্থী অংশ থেকে শুরু করে আরো নানা দিক থেকে চাপের মুখে আছেন। ভূমি সংস্কারের জন্য তার সরকার এখন এমনকি সংবিধান পরিবর্তনের কথাও ভাবছে।

ভূমি সংস্কার মন্ত্রী মাইটি এনকোয়ানা মাশাবানি বলছেন, তারা আইনি পথে সুশৃঙ্খলভাবে কাজটা করবেন এবং এতে শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকদের সহযোগিতা চান।

বলেন, আমরা কারও জমি কেড়ে নেব না। আমরা আইনি পথে জমি অধিগ্রহণ করব। আমরা এভাবে আইনি পথে জমি নিতে পারি, আমাদের নেওয়া উচিত। আমরা একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার। আমাদের এই কাজটা দ্রুত করতে হবে। জমি সবাইকে ভাগাভাগি করে ভোগ করতে হবে। এবং এটা এখনই ঘটতে হবে।

কিন্তু সরকারের এ ধরনের কথাবার্তায় শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা বেশ ভয়ের মধ্যে আছে। জোহানেসবার্গের উত্তরে কিছু শ্বেতাঙ্গ খামার মালিককে রাতে টহল দিতে দেখা গেছে তাদের খামার রক্ষায়।

শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকদের পক্ষের একটি সংগঠনের মুখপাত্র ইয়ান ক্যামেরন মনে করেন, শ্বেতাঙ্গদের জমি কেড়ে নেওয়া হলে দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে।

‘এর আগে জিম্বাবুয়েতেও কিন্তু আমরা একই ধরনের কথা-বার্তা শুনেছি। কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমি অধিগ্রহণের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কিন্তু তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কিন্তু এটা কাজ করেনি।’

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব কম লোকই আসলে এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করবেন। অধ্যাপক রুথ হল ভূমি সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার কড়া সমালোচক।

‘এখন যে মোড় পরিবর্তন আমরা দেখছি, আমার মতে তা ভূমি সংস্কার প্রক্রিয়াকে উজ্জীবিত করবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিকভাবে এটা একটা বিরাট সুযোগ। ভূমি সংস্কার নিয়ে এরকম খোলামেলা আলোচনা আমরা গত ২০ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখিনি।’

অধ্যাপক রুথ হল মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোর এটা একটা সোনালি সুযোগ।

রাজনীতিকরা সেই সুযোগ কতটা নিতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist