আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৬ মে, ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘যেকোনো সময়’ কথা বলতে প্রস্তুত উ. কোরিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে প্রস্তুাবিত বৈঠক বাতিল করে দিলেও পিয়ংইয়ং বলছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘যে কোনো সময়, যে কোনো আকারে’ কথা বলতে এখনো ইচ্ছুক।

বৃহস্পতিবার কিমের কাছে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প বৈঠকটি বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। কারণ হিসেবে তিনি উত্তর কোরীয় নেতার সাম্প্রতিক বিবৃতিতে ‘তীব্র ক্ষোভ ও প্রকাশ্য শত্রুতা’ থাকার কথা উল্লেখ করেন। বিবিসি একথা জানিয়েছে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উত্তরের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম ক্যায়া-গোয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, উত্তেজনা নিরসন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিদ্যমান দূরত্ব কমাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে ‘যে কোনো সময়’ কথা বলতে পিয়ংইয়ং প্রস্তুত।

‘শীর্ষ বৈঠক বাতিলে তার হঠাৎ ও একতরফা এ সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অনেকটাই অপ্রত্যাশিত, আমরা অত্যন্ত দুঃখিতও,’ উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এমনটাই জানায়।

কয়েক দশক ধরে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে উত্তরের শীর্ষ নেতা কিম জং উনের বৈঠকের পর কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরার আশা করা হচ্ছিল। বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে একসঙ্গে কাজ করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন দুই নেতা।

ওই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় কিম ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করছিলেন পর্যবেক্ষকরা। পিয়ংইয়ং অবশ্য একতরফা কেবল নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র বিসর্জন দেওয়া হবে না বলে জোর দিয়ে আসছিল।

এ মাসের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উত্তর কোরিয়া সফরের পরপরই কিমের সঙ্গে বৈঠকের তারিখ ও স্থান নির্ধারিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। জুনে সিঙ্গাপুরে প্রস্তাবিত ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে, তা হতো দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তরের কোনো শীর্ষ নেতার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।

মে-র মাঝামাঝি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া নিয়ে পিয়ংইয়ংয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণ করা হতে পারে এমনটা বললে বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়। ২০০৩ সালে লিবিয়া পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করার অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃস্থাপিত হয়। এর ৮ বছর পর ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহী ও আধাসামরিক গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন গাদ্দাফি। ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ার পর গাদ্দাফিকে হত্যাও করা হয়।

বোল্টনের দেওয়া লিবিয়া মডেলের উদাহরণ উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে আতঙ্কিত করতে পারে বলে তখনই ধারণা করেছিলেন পর্যবেক্ষকরা।

পিয়ংইয়ং বোল্টনের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণের কথা ভাবছেন না তারা।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স একই প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সম্ভবত লিবিয়ার মতই পরিণতি ঘটবে।

যার প্রতিক্রিয়ায় উত্তরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উপমন্ত্রী পেন্সের মন্তব্যকে ‘কা-জ্ঞানহীন’ আখ্যা দেন। কূটনীতি ব্যর্থ হলে পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শনী শুরু হয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। এর পরপরই বৃহস্পতিবার কিমকে লেখা চিঠিতে বৈঠক বাতিলের কথা জানান ট্রাম্প। চিঠিতে তিনি বলেন, আপনার (কিম) সঙ্গে মিলিত হতে খুব উদগ্রীব ছিলাম। যদিও দুঃখজনক, আপনার সাম্প্রতিক বিবৃতিতে তীব্র ক্ষোভ ও প্রকাশ্য শত্রুতা প্রকাশিত হওয়ায় আমি মনে করছি, এই সময়ে দীর্ঘ পরিকল্পিত এই বৈঠক সঠিক হবে না, বলেন তিনি। বিবিসি বলছে, দক্ষিণ কোরিয়াকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পিয়ংইয়ং তাদের পারমাণবিক কেন্দ্র ভেঙে ফেলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে ‘আস্থার অভাব’ প্রতীয়মান হওয়ার পরপরই তারা জুনের বৈঠকের পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। পিয়ংইয়ং ধারাবাহিকভাবে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে যাচ্ছিল’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিতে সিঙ্গাপুরে মার্কিন ডেপুটি চিফ অব স্টাফকে পাঠানো হলেও উত্তর কোরিয়া তাদের প্রতিনিধিকে পাঠায়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে কথা বলার পর কিমকে লেখা চিঠির ‘প্রতিটি শব্দ ট্রাম্পই ঠিক করে দিয়েছেন’ বলেও জানান এ কর্মকর্তা। যদিও ‘বিভ্রান্ত’ মুন তার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ট্রাম্প-কিম প্রস্তুাবিত বৈঠক না হওয়ার ঘটনা ‘খুবই দুঃখজনক’। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া উভয় পক্ষকেই শান্তি প্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে না আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস।

‘কিম জং উনের ভ-ামি দেখতে পাওয়ায়’ ট্রাম্পের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর টম কটন। অন্যদিকে ডেমোক্রেট সিনেটর ব্রায়ান স্কাটজ বলছেন, ট্রাম্পের মতো ‘শিক্ষানবিশ যখন যুদ্ধবাজদের সঙ্গে জোড়া বাঁধে’ তখন এমনটা ঘটাই স্বাভাবিক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist