আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পরমাণু চুক্তি
ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইরানের শর্ত
তেহরানের সঙ্গে শক্তিধর দেশগুলোর করা পারমাণবিক চুক্তি অক্ষুণœ রাখতে তিন ইউরোপীয় দেশকে কয়েকটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। শর্তগুলো না মানলে ইরান আবারো পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। খামেনির সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা খবরটি জানিয়েছে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে ইউরেনিয়াম প্রকল্প সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। পূর্বসূরি ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে ১২ মে তা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চুক্তি কার্যকর রাখতে প্রতি তিন মাস পরপর দেশটির প্রেসিডেন্টের সম্মতি দরকার। ১২ মে পরবর্তী তিন মাসের জন্য এই চুক্তিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর না করায় যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সমঝোতা ভেস্তে যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে এলেও চুক্তি বহাল রাখার ঘোষণা দেয় বাকি দেশগুলো।
বুধবার চুক্তিভুক্ত তিন ইউরোপীয় দেশকে (ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি) কয়েকটি শর্ত বেঁধে দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি মনে করেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সাংঘর্ষিক সম্পর্ক নেই, তবে এসব দেশের প্রতি তেহরানের অবিশ্বাস আছে। খামেনি বলেন, ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোকে ইরানের সঙ্গে নিরাপদ বাণিজ্য করতে হবে। আমরা এ তিন দেশের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে চাই না, কিন্তু আমরা তাদের বিশ্বাসও করি না।
সর্বোচ্চ নেতা তার শর্তের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থেকে ইরানের তেল বিক্রিজনিত কার্যক্রমকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে অবশ্যই তেল কেনা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশগুলোকে অঙ্গীকার করতে হবে যে তারা ইরানের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মধ্যপ্রাচ্যজনিত কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় যাবে না।
খামেনি বলেন, ইউরোপকে ইরানের তেল বিক্রির বিষয়টিকে পূর্ণ গ্যারান্টি দিতে হবে। যেহেতু মার্কিনিরা আমাদের তেল বিক্রিকে ব্যাহত করলে ইউরোপকে সে ক্ষতি মেটাতে হবে এবং ইরানের তেল কিনতে হবে। ইউরোপীয় দেশগুলো যদি এসব কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে, তাহলে ইরান পরমাণু কর্মসূচি আবার চালু করার অধিকার সংরক্ষণ করে বলে সতর্ক করেন খামেনি।
চীন সফরে মারকেল, ইরানি পরমাণু সমঝোতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি : জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেছেন, তার দেশ এবং চীন ইরানের পরমাণু সমঝোতা রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দুই দেশই ২০১৫ সালের পরমাণু সমঝোতায় সই করেছে। চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মারকেল বলেন, পরমাণু সমঝোতা কোনো আদর্শ চুক্তি নয়, তবে অন্য যেসব অপশন রয়েছে, সেগুলো মোটেই স্থিতিশীল নয়। এ কারণে আমরা এই সমঝোতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে যাব। গত ৮ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর জার্মানি ও চীন দুই দেশই সমঝোতা রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দেশ দুটি সমঝোতা রক্ষার পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে এবং দুই দেশই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে চায়। ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের ভবিষ্যৎ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন মারকেল। তিনি জানান, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের কিছু কোম্পানি ইরান থেকে তাদের কর্মকা- গুটিয়ে নেবে। দুই দিনের সফরে চীন গেছেন অ্যাঙ্গেলা মারকেল। সফরে তিনি জার্মানির সরকার ও ব্যবসায়ী নেতাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
"