আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মালয়েশিয়ায় আরেক ইমেলদার কাহিনী
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কয়েকশ’ হাতব্যাগ, ঘড়ি ও দামি গহনা উদ্ধারের পর সাবেক ফার্স্টলেডি রোসমাহ মানসুরের বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে, যেন আরেক ইমেলদা মার্কোসের জীবন কাহিনী। ফিলিপাইনের সাবেক এই ফার্স্টলেডির কাহিনীও আশির দশকে পত্র-পত্রিকার পাতাজুড়ে থাকত। শুক্রবার ভোররাতের দিকে নাজিবের তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে মালয়েশীয় পুলিশ ২৮৪টি বাক্সভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি হ্যান্ডব্যাগ, ৭২টি ব্যাগভর্তি গহনা ও দামি ঘড়ি এবং বিপুল পরিমাণ রিংগিত ও মার্কিন ডলার জব্দ করেছে।
নাজিব পরিবারের ওই অ্যাপার্টমেন্টগুলো থেকে ব্যয়বহুল হারমেস ওয়ানসহ কয়েকশ’ হাতব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা কয়েক লাখ ডলার মূল্যের বিরকিন হাতব্যাগগুলো ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের মতো সেলিব্রেটিদের পছন্দের শীর্ষে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন পুলিশের প্রধান অমর সিং বলেন, ঠিক কী পরিমাণ গহনা উদ্ধার করা হয়েছে, তা আমি এখনই বলেতে পারছি না। কারণ আমরা বাক্সেভরা গহনা জব্দ করেছি। তবে এটা বলতে পারি, পরিমাণ অনেক বেশি।
জব্দ করা পণ্যের মধ্যে হারমেসের মতো নামি কোম্পানির বিরকিন হাতব্যাগ ও ঘড়ি আছে জানালেও এগুলোর মালিকানা কার, তা নিয়ে কিছু বলেনি মালয়েশীয় পুলিশ।
নাজিবের বাড়িতে উদ্ধার অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর মাহাথিরের পরা ৩ ডলার মূল্যের একজোড়া বাটা জুতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটি দিয়ে দুই নেতার জীবনযাপনের মধ্যে তুলনাও করেন অনেক ব্যবহারকারী।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, নাজিবের ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে চ্যানেল, লুইজ ভুইতন ও অস্কার দে লা রেন্টের মতো ৫২টি ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ ও দামি ১০টি ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
ওয়ানএমডিবি তহবিলের চুরি করা টাকা দিয়ে নাজিব তার স্ত্রীর জন্য গহনা কিনেছিলেন বলে অভিযোগ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। কেনা গহনার মধ্যে ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি বিরল গোলাপি হীরা এবং ১৩ লাখ ডলার মূল্যের ২৭টি স্বর্ণের নেকলেস। এসব পণ্য উদ্ধারের পর রোসমাহ’র বিলাসী জীবনযাপনের দিকে জনসাধারণের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। রোসমাহ কোন প্রক্রিয়ায় এতসব দামি বিলাসবহুল পণ্য সংগ্রহ করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফার্স্টলেডি থাকার সময়ও তার বিত্তবৈভব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। গণমাধ্যমের ওপর তখনকার সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকায় সে সময় এ নিয়ে সমালোচনার তেমন সুযোগ ছিল না।
২০১৫ সালের শুরুতে সাধারণ মালয়েশিয়ানরা যখন তাদের ব্যয়ের ওপর সরকারের নতুন কর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন, রোসমাহকে তখন তার হেয়ারড্রেসারের বাড়তি বিল নিয়ে অনুযোগ করতে দেখা গিয়েছিল।
মালয়েশিয়ায় মাসিক ন্যূনতম বেতন তখন ছিল ৯০০ রিংগিত; সে সময়ই করের কারণে কেশ-বিন্যাসের প্রতিটি সেশনের জন্য ১২০০ রিংগিত (৩০০ ডলার) করে খরচ পড়ছিল বলে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে দুঃখ করে বলেছিলেন ফার্স্টলেডি।
দামি ঘড়ি ও হাতব্যাগ নিয়ে স্বামী নাজিব রাজাকের সঙ্গে বিভিন্ন উপলক্ষে জনসমক্ষে আসা রোসমাহর ওই বক্তব্য দেশটির সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এ মাসের শুরুতে নাজিবের ক্ষমতাচ্যুতি ও তাদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিলাসবহুল বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উদ্ধারের পর গণমাধ্যমের পাশাপাশি মালয়েশীয় নাগরিকরাও সাবেক ফার্স্টলেডি কীভাবে এত বিলাসী জীবনযাপন করতেন, তা উন্মোচনের দাবি তুলেছেন।
অনেকেই তাকে ফিলিপিন্সের সাবেক ফার্স্টলেডি ইমেলদা মার্কোসের সঙ্গে তুলনা করছেন। ১৯৮৬ সালে স্বামী ফার্দিনান্দ মার্কোস যখন প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য হন, তখন ইমেলদার ১ হাজার ২০০ জোড়ারও বেশি জুতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
নাজিবের স্ত্রী অবশ্য সবসময়ই নিজের পছন্দের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেন, এসব জিনিসপত্র ও কাপড়চোপড় আমি নিজের টাকায় কিনেছি। এতে অন্যায় কী হলো? বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে সমালোচনার উত্তরে তাকে নিয়ে লেখা অনুমোদিত জীবনী গ্রন্থে জবাব দিয়েছিলেন রোসমাহ। ২০১৩ সালে তার ওই জীবনীটি প্রকাশিত হয়েছিল।
একজন নারী হিসেবে, একজন নেতার স্ত্রী হিসেবে আমাকে প্রস্তুত হতে হয়। আমার চেহারাকে পরিচ্ছন্ন করতে হয়, যতœ নিতে হয়। যখন অন্যান্য দেশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আগোছালো স্ত্রীকে নিয়ে মজা করে, তখন এটি মালয়েশিয়ানদের জন্যও বিব্রতকর, বলেছিলেন তিনি।
নিজের আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে রোসমাহ ‘সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তার বিরুদ্ধে ওঠা গণমাধ্যমে ঝড়’ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।
"