আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উত্তর কোরিয়া নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিরোধ ট্রাম্পের
উত্তর কোরিয়া নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের ভাবনার বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পিয়ংইয়ংয়ের ‘অ-পারমাণবিকীকরণের’ ক্ষেত্রে ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণ করা হবে না জানিয়ে উত্তরের শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে আশ্বস্তও করেছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিঙ্গাপুরে আগামী মাসে যথাসময়েই কিমের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এমন আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
২০০৩ সালে লিবিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রভা-ার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে বিস্মিত করে দিয়েছিলেন দেশটির নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করার অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃস্থাপিত হয়।
আট বছর পর নেটো-সমর্থিত বিদ্রোহী ও আধাসামরিক গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন গাদ্দাফি। বিদ্রোহীদের হাতে আটক হওয়ার পর তাকে হত্যাও করা হয়।
বোল্টনের দেওয়া লিবিয়া মডেলের উদাহরণ উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে আতঙ্কিত করতে পারে তখনই ধারণা করেছিলেন পর্যবেক্ষকরা।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়াও পাঠায় পিয়ংইয়ং। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে কেবল উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে চাপ দিতে থাকলে ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে বলেও সতর্ক করে তারা। সিঙ্গাপুরের বৈঠক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন মেটাতে দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতা করতে চাইলেও পিয়ংইয়ং তাও প্রত্যাখ্যান করে। যদিও বৈঠকটি যথাসময়েই হবে বলে আশা মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে লিবিয়া মডেল নিয়ে ভাবছি না আমরা। এমন এক চুক্তির কথা আমরা বিবেচনা করছি, যেখানে তিনি (কিম জং উন) থাকতে পারেন, নিজের দেশেই থাকতে পারবেন, দেশ পরিচালনাও করতে পারবেন, তার দেশ হয়ে উঠবে খুবই সমৃদ্ধ,’ বলেন ট্রাম্প।
কিমের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠকের কিছুই বদলায়নি বলেও মন্তব্য তার।
‘উত্তর কোরিয়া নিয়ে কিছু বদলেছে কিনা আমাদের জানা নেই। আমাদের এখনো কিছু বলা হয়নি। যদি বৈঠক না হয়, ঠিক আছে। আর যদি হয়, সম্ভবত আমরা একটি সফল বৈঠক করতে যাচ্ছি।’
কোরীয় উপদ্বীপে চলমান ‘অপারেশন ম্যাক্স থান্ডার’ নিয়েও সিউলের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছে পিয়ংইয়ং। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এ যৌথ সামরিক মহড়াকে উত্তরে আগ্রাসনের মহড়া অ্যাখ্যায়িত করে দুই কোরিয়ার মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠকও বাতিল করেছে তারা।
দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষকে ‘অপদার্থ ও কা-জ্ঞানহীন’ বলে গালমন্দ করে দুই কোরিয়ার মধ্যে বিবদমান বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি না হলে আর কোনো আলোচনা হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।
যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়া এবং পক্ষত্যাগী একজনকে ‘সিউল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্যও দক্ষিণের সমালোচনা করেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রধান আলোচক, দেশটির শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণ কমিটির চেয়ারম্যান রি সন-গোন। ‘উদ্ভূত এই মারাত্মক পরিস্থিতি, যাকে কেন্দ্র করে উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ভেস্তে গেছে, সেটির কোনো সমাধান না হলে আবারো সরাসরি আলোচনায় বসা আর কখনো সহজ হবে না,’ সন-গোনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় উত্তর কোরিয়ার বার্তা সংস্থা কেসিএনএ।
"