আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঘুষ নিয়ে বয়ান বদলানোর চেষ্টা
নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ভারতের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের দিল্লিতে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে যে তার বয়ান বদল করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য তার বাবা-মা অভিযুক্তদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। ১৫ বছরের ওই কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তার মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবা পলাতক। গত বছর আগস্ট মাসে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছিল ওই কিশোরীর ওপরে। পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের। কিন্তু তারা সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছে। পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে ওই কিশোরী জানিয়েছে, তারপর থেকেই অভিযুক্তদের তরফ থেকে তার বাবা-মায়ের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। ওই কিশোরী বলেছে তার বাবা-মা চাপ দিচ্ছিল আদালতে তার বয়ান বদল করতে। ২০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল ধর্ষিতার পরিবারকে। অগ্রিম হিসাবে ৫ লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছিল মেয়েটির বাবা-মায়ের কাছে, বলছে দিল্লি পুলিশ। সে বয়ান বদল করতে না চাওয়ায় বাবা-মা তাকে মারধরও করেছে। এমনকি একটা ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে দিয়েছিল। বাবা-মা যখন বাড়িতে ছিলেন না সেই সময়ে ওই মেয়েটি বাড়িতে রাখা নগদ টাকার বান্ডিল নিয়ে প্রেমনগর পুলিশ ফাঁড়িতে হাজির হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। আউটার দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এম এন তিওয়ারি বলছেন, প্রথমে ফাঁড়ির ডিউটি অফিসারকে ওই কিশোরী জানায় যে তার কাছে কাগজে মোড়া ৩ লাখ টাকা রয়েছে। অভিযুক্তরা ওই টাকা দিয়েছে তার বাবা-মাকে, যাতে সে আদালতে বয়ান বদল করে। ওই কিশোরী পুলিশকে আরো জানিয়েছে, ধর্ষণে অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই তার ওপরে বয়ান বদলের জন্য চাপ দিতে শুরু করে বাবা-মা। তিওয়ারি জানিয়েছেন, মেয়েটির অভিযোগের ভিত্তিতে তার বাবা-মা এবং অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। মাকে গ্রেফতার করা গেছে, কিন্তু তার বাবা পলাতক রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ওই কিশোরীকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রায় এক সপ্তাহ পরে সে বাড়ি ফিরে আসে, আর অভিযোগ করে যে তাকে আটকিয়ে রেখে গণধর্ষণ করা হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েদের থেকে সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিলেও সাধারণত বাবা-মা অন্তত তার পাশে থাকেন। ওই এক সপ্তাহ ধরে তাকে নয়ডা আর গাজিয়াবাদের বেশ কয়েকটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও সে অভিযোগ জানিয়েছিল পুলিশের কাছে।
তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এলাকারই কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
তারপর থেকেই বয়ান বদল করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে, ঘুষও দেওয়া হয়েছে বাবা-মাকে। পুলিশ বলছে, এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। নানা সময়ে ধর্ষণের শিকার মেয়েদের দিক থেকে সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিলেও সাধারণত দেখা যায় যে, বাবা-মা অন্তত তার পাশে আছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযুক্তর কাছ থেকে ঘুষ নিলেন বাবা-মা, বয়ান বদলে চাপ দিলেন, এটাই আশ্চর্যের।
"