আন্তর্জাতিক ডেস্ক
হাল ফেরাতে সময় চাচ্ছেন জুকারবার্গ
সংস্থার হাল ফেরাতে মরিয়া কর্তা। তবে পুরো মেরামত যে এখনই সম্ভব নয়, তাও মেনে নিলেন তিনি। ফেসবুকের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে তাই আরো কয়েক বছর সময় চাচ্ছেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও মার্ক জুকারবার্গ।
সময় তো লাগবেই। কারণ বিতর্ক পিছু ছাড়ছে কই! মার্কিন ভোট, ব্রেক্সিটের পরে এবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গেও জুড়ে গেছে ফেসবুকের নাম। ডিজিটাল বিশ্লেষক রেমন্ড সেরাটো মিয়ানমারের উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত মা বা থা’র সমর্থকদের ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করে বলছেন, রাখাইন প্রদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে ফেসবুকের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে এক বছর ধরে। সেরাটোর দাবি, রাখাইনে চূড়ান্ত বোমাটা ফাটে গত বছর আগস্টের শেষ সপ্তাহে। ওই সময়ে ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক পোস্ট ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যায়। আর তার পরই ব্যাপক সামরিক অভিযানের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা। যার পেছনে ফেসবুকেরই কালো হাত দেখছেন অনেকে।
মিয়ানমারে হেট স্পিচ বা বিদ্বেষমূলক বার্তা নিয়ে ২ বছর ধরে গবেষণা করছেন ইনস্টিটিউট অব ওয়ার অ্যান্ড পিসের বিশ্লেষক অ্যালান ডেভিস। তিনিও বলছেন, ওই সময়ে অবাধ ঘৃণা ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
তার মতো অনেকেরই অভিযোগ, ফেসবুক এসব জেনেও হাত গুটিয়ে বসেছিল। তার ‘স্বপ্নের প্রকল্প’কে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাবিরোধী উত্তেজনা তৈরির অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন জুকারবার্গও। তবে তার দাবি, বিষয়টা আমরা ধরতে পেরেছিলাম। আটকেও দিয়েছিলাম। এখন এমন বিষয়ে আরো কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
ফেসবুকের মুখ তবু পুড়ছেই। যার জেরে সুর চড়াতে শুরু করেছে সিলিকন ভ্যালির একটা বড় অংশ। বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এমন মেরুকরণ এর আগে কখনো দেখা যায়নি। অ্যাপলের সিইও টিম কুক সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ফেসবুকের ‘বিজনেস মডেল’ নিয়েও! কুকের দাবি, নেটিজেনের দেওয়া তথ্য থেকে ধান্দা করতে গিয়েই ডুবেছে ফেসবুক। আক্রমণ শানিয়েছে টেসলা, সেলসফোর্সের মতো সংস্থাও।
কাল এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুকারবার্গ নিজেদের জন্য সময় চেয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিন্দুকদেরও একহাত নেন। তার দাবি, এই সোশ্যাল মিডিয়া সবার। ফেসবুকের ব্যবসা কোনো দিনই শুধু বড়লোকদের স্বার্থে ছিল না। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরেই জুকারবার্গ জানান, ফেসবুকের যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তা আদর্শগত। তার কথায়, নেট দুনিয়ায় যোগাযোগ তৈরিতে ফেসবুকের ভূমিকা ইতিবাচক। তবে এর ব্যবহার যে নেতিবাচক হতে পারে, আমার সংস্থা তা নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি।
তা হলে কি তথ্য বেহাত হতে পারে জেনেই ফেসবুকে থাকতে হবে নেটিজেনদের? জুকারবার্গ কথা দিয়েছেন, এর সমাধান বের করতেই হবে। তিন বা ছয় মাসে করতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু সম্ভব নয় বলেই কয়েকটা বছর সময় চাচ্ছি। ফেসবুককে নিñিদ্র করবই। ফেসবুক বিশ্বের পক্ষে ভালো, না খারাপ ব্যবহারকারীদের একাংশের কাছে এ নিয়ে জনমতও নিচ্ছেন কর্তা।
"