আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৪ এপ্রিল, ২০১৮

চীন-আমেরিকা বাণিজ্যযুদ্ধ

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, ২০১৭ সালে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৮০০ বিলিয়ন ডলার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করেন চীনের কাছে বাজার খুলে দিয়ে আমেরিকার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তিনি হিসাব দিচ্ছেন ২০১৭ সালে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ৮০০ বিলিয়ন (৮০,০০০ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। আর এই ঘাটতির প্রধান কারণ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতা।

তার কথা, চীনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নানা কারসাজি করে শুধু জিনিস বিক্রি করা যার পরিণতিতে আমেরিকার শত শত শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতসহ শত শত চীনা আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ওইসব পণ্যের আমদানি মূল্য ৬,০০০ কোটি ডলার হতে পারে। সোমবারে এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন মার্কিন মদ, শূকরের মাংস, ফলসহ ৩০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক বসিয়েছে।

বিশ্বের ১ নম্বর এবং ২ নম্বর অর্থনীতির মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। ট্রাম্প এই উদ্বেগকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ ভালো এবং আমেরিকার তাতে কোনো ক্ষতি নেই, বরঞ্চ লাভ।

এই যুদ্ধে কি সত্যিই তিনি জিতবেন? অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, বাণিজ্যের লড়াই এমন এক লড়াই যেটাতে জেতা ভীষণ কঠিন। কেন তার পাঁচটি কারণ দিয়েছেন নিউইয়র্কে বিবিসির বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদদাতা নাটালি শারম্যান।

শুল্ক বসালেই আমেরিকায় স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম শিল্পে চাকরির সুযোগ নাও বাড়তে পারে। মি ট্রাম্প মনে করছেন বাড়তি আমদানি শুল্ক বসালে দেশের ভেতর ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে এবং চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

কিন্তু ইতিহাস বলে, অতীতে বহুবার ইস্পাত শিল্পকে এভাবে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইস্পাত শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন কমছে। ২০০২ সালে একটি গবেষণা সংস্থার হিসাবে, ইস্পাত আমদানির ওপর আমদানি কর বসালে বড় জোর ৩৫০০ মানুষের চাকরি বাঁচবে। বাড়তি শুল্কের ফলে আমেরিকায় দাম বাড়বে। আমেরিকার ইস্পাত শিল্পে বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা ১৪০,০০০। কিন্তু অন্য যেসব শিল্প ইস্পাতের ওপর নির্ভর করে সেগুলোতে শ্রমিকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে সেসব ইস্পাত নির্ভর শিল্প।

খুচরা বিক্রেতাদের সমিতি বলেছে, ট্রাম্প আসলে সাধারণ আমেরিকান পরিবারগুলোর ওপর কর বসাচ্ছেন। বাড়তি শুল্কে আমেরিকার মিত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তারা পাল্টা জবাব দেবে আমেরিকা সবচেয়ে বেশি ইস্পাত আমদানি করে কানাডা থেকে। তারপর ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মেক্সিকো থেকে। এসব দেশ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক এবং সামরিক মিত্র। ফলে ইস্পাতের ওপর শুল্ক বসালে এরা ক্ষেপে যাবে।

আগামী দিনগুলোতে হয়তো দেখা যাবে, কানাডা বা ইউরোপ এই বাড়তি শুল্ক থেকে অব্যাহতি চাইবে। না পেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ট্রাম্প বিশ্বাস করেন মিত্র দেশগুলোর মাধ্যমে আসলে চীন আমেরিকার বাজারে সস্তা ইস্পাত ঢোকাচ্ছে ফলে তাদের ওপরও শুল্ক না চাপিয়ে উপায় নেই।

চীনের হাতে পাল্টা অস্ত্র : গাড়ি, কৃষি শিল্পের মতো যেসব আমেরিকান শিল্প চীনে বাজার পাচ্ছে বা চায়, তারা এই লড়াইকে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তারা ভয় পাচ্ছে চীন পাল্টা জবাব দেবে এবং দিতে শুরুও করেছে। সোমবার মদ এবং শূকরের মাংসসহ ১৮০টির মতো মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছে চীন।

অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর প্রভাব : ট্রাম্প চাচ্ছেন আমেরিকার রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে। কিন্তু এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া ধারণা করা এ মুহূর্তে কঠিন। প্রিন্সটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনেথ লোয়ান্ডে বলছেন, তার কারণ নির্বাচনের এখনো অনেক দেরি। প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আর সংসদে তাদের দলের সদস্যদের সিংহভাগই তীব্র সমালোচনা করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist