আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পরমাণু শক্তির যুদ্ধজাহাজ বানাচ্ছে চীন
সমুদ্রে উপস্থিতি বাড়ছে চীনের। চীন সাগর শুধু নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অংশেই নিজেদের প্রভাব বাড়াচ্ছে বেইজিং এবং আগামী দিনে তা আরো বাড়বে ধরে নিয়ে নৌবহরে বাড়তি অক্সিজেন জোগাতে বড়সড় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। ডিজেল বা গ্যাসে চলা যুদ্ধজাহাজ নিয়ে নৌবহরকে বেশি দূরে নিয়ে যাওয়াটা সহজ নয়। এবারে তাই পরমাণু শক্তিতে চলে এমন যুদ্ধজাহাজ তৈরির লক্ষ্যে এগোচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় জাহাজ তৈরি ও মেরামতি সংস্থা সিএসআইসি।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০৫০ সালের মধ্যে চীনা সেনাকে বিশ্বমানের লড়াকু বাহিনীতে পরিণত করার শপথ নিয়েছেন গত অক্টোবরে। এর জন্য মূল দুটি বিষয়ের ওপরে জোর দিয়েছে তার সরকার। এক. প্রযুক্তির উন্নয়ন। দুই. যথেষ্ট সংখ্যায় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, শত্রæর নজর এড়িয়ে আঘাত হানতে সক্ষম এমন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য মোটা বরাদ্দ।
‘পাপা’ শির স্বপ্ন পূরণে ২০২৫ সালের মধ্যে সিএসআইসি কী করতে চলেছে তার একটি রূপরেখা দিয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পরমাণুচালিত ডুবোজাহাজ, শত্রæর নজরদারি এড়াতে সক্ষম শব্দহীন ডুবোজাহাজ, যান্ত্রিক বুদ্ধিতে চলে এমন চালকহীন যুদ্ধ-উপকরণ, জল-স্থল-আকাশে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার ত্রিমাত্রিক সরঞ্জাম তৈরি এবং অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে চীনের এ সংস্থা। প্রথমে ওই ওয়েবসাইটে পরমাণুচালিত বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের কথাও উল্লেখ করেছিল তারা। পরে তা মুছে দেয়। যদিও চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে এর উল্লেখ রয়ে গেছে।
এতেই প্রশ্ন উঠছে, পরমাণু-যুদ্ধজাহাজ তৈরির প্রযুক্তি সত্যিই কি হাতে চলে এসেছে চীনের? সরাসরি উত্তর না মিললেও সন্দেহ নেই, চীন এই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। বেইজিংয়ের বিশিষ্ট নৌসেনা বিশেষজ্ঞ লি জি বলেছেন, ‘মনে হয় এটা বলা যায় যে, বড় জলযানে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে চীন। গত নভেম্বরেই সিএসআইসির কর্তা এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।’
লি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সমুদ্রে চীনের স্বার্থ ক্রমেই প্রসারিত হবে। কিন্তু ডিজেল বা গ্যাসচালিত যুদ্ধজাহাজ নিয়ে বেশি দূর যেতে হলে জ্বালানিবাহী বিশাল বহর সঙ্গে নিতে হয়। নয়তো জ্বালানি ভরতে বন্দরে-বন্দরে ভিড়তে হয়। এজন্যই প্রয়োজন পরমাণ-জাহাজের। আমেরিকার ১০টি পরমাণুচালিত বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। আরো দুটি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো টানা ছয় মাস সমুদ্রে চলতে পারে। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, বেইজিংয়ের লক্ষ্য ছয়টি এমন জাহাজ নৌসেনার হাতে তুলে দওয়া। চীনা নৌসেনা প্রথম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটি পেয়েছে ২০১২ সালে। সেটি ছিল আসলে ইউক্রেন থেকে কেনা সোভিয়েত জমানার জাহাজ ‘লিয়াওনিং’। চীন দেশেই তৈরি করেছে দ্বিতীয়টি।
‘লিয়াওনিং’র অনুকরণে তৈরি এ জাহাজের নাম ‘টাইপ ০০১এ’। সাংহাইয়ে তৈরি হচ্ছে তৃতীয়টি। যার নাম হবে ‘টাইপ ০০২’। এটিতে থাকবে ‘ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক এয়ারক্রাফট লঞ্চ’ ও ‘স্কি-জাম্প’ সিস্টেম। লি জানাচ্ছেন, সম্ভবত চতুর্থটিতেই ‘পাওয়ার ইউনিট’-এ আমূল বদল আসবে। ইঙ্গিত পরমাণু জ্বালানির দিকে। বিষয়টি অতি গোপনীয়। স্বাভাবিকভাবেই সরকারি সূত্রে এর কথা স্বীকার করা হচ্ছে না।
"