আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনকেও লক্ষ্য বানাতে পারে : সিআইএ প্রধান
যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের শেষদিকে হতে যাওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনেও রাশিয়া হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে ধারণা করছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক মাইক পম্পেও। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্ষতি করতে মস্কোর চেষ্টা কমেছে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সিআইএ প্রধানের শঙ্কা, উত্তর কোরিয়া কয়েক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত নন, আলোচিত বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’-এ বলা সাংবাদিক মাইকেল ওলফের এ ভাষ্যকে ‘আবোলতাবোল’ বলেও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। মস্কো এবং ট্রাম্প অস্বীকার করলেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে অভিযোগ করে আসছে। ওভাল অফিসে বসার পর প্রথম বছরের পুরোটাই ট্রাম্পকে এ অভিযোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে ক্রেমলিনের সঙ্গে রিপাবলিকান শিবিরের সংযোগ এবং সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস ও বিচার বিভাগে তদন্তও চলছে। ভার্জিনিয়ার ল্যাংলিতে সিআইএর সদর দপ্তরে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন পম্পেও। সাক্ষাৎকারে পম্পেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে সিআইএর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে, সে সম্বন্ধেও স্পষ্ট ধারণা দেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা। আমরা বের হই এবং মার্কিন জনগণের হয়ে যে কোনোভাবে হোক তথ্য চুরি করি। আমি আবারও (সিআইএকে) সামনের পায়ে দাঁড় করাতে চাই। দায়িত্ব পালনের বছরখানেকের মাথায় সিআইএর এ প্রধান বলছেন, তার লক্ষ্য গোয়েন্দা সংস্থাটির কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও ভারমুক্ত করা। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা থাকার কথা স্বীকার করলেও পম্পেও বলছেন, তার দৃষ্টিতে রাশিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী। ইউরোপের দেশগুলোতে মস্কোর হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, তাদের কর্মকান্ড উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে, এমনটা দেখছি না।
নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনেও রাশিয়াকে নিয়ে উদ্বেগ আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইএ পরিচালক বলেন, ‘অবশ্যই। আমার ধারণা তারা এটা করার চেষ্টা করে যাবে, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী আমেরিকা একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমর্থ হবে। আমরা এমন এক দৃঢ় পদ্ধতিতে ফিরে যেতে চাই, যেন আমাদের নির্বাচনে তাদের প্রভাব বড় না হয়ে ওঠে।
রাশিয়ার ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের পাল্টা জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মস্কোর হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবিকে প্রায়ই উড়িয়ে দেন ট্রাম্প, সিআই প্রধান কি এই দুইয়ের মাঝখানে সংযোগ রক্ষা করছেন?
উত্তরে পম্পেও বলেন, ‘আমি সংযোগ টানছি না, সত্য টানছি।’ সিআইএ প্রধান হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রতিদিন ব্রিফ করার দায়িত্ব পম্পেওর। দু’জন ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকলে প্রায় দিনই এ ব্রিফ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সাম্প্রতিক ঘটনা ও কৌশলগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলে। বিদেশ সফর কিংবা বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রেসিডেন্টকে এমনভাবে ব্রিফ করা হয় যেন তিনি ‘তথ্যগত সুবিধা’ আদায় করে নিতে পারেন। একই আলোচনায় মাইকেল ওলফের লেখা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ বইতে ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়ে করা দাবিও উড়িয়ে দেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা ভিত্তিহীন। আমি বইটি পড়িনি, ইচ্ছাও নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে প্রেসিডেন্টের নজর ও উপলব্ধি নেই। এ ধরনের দাবি মিথ্যা ও বিপজ্জনক। এ ধরনের আবোলতাবোল কিছু লেখার জন্য কেউ সময় ব্যয় করেছেÑএটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দিয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ট্রাম্পের করা বিভিন্ন টুইট ও খোলামেলা বক্তব্যেও আপত্তি দেখছেন না সিআইএপ্রধান। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের ধারাবাহিক টুইট দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘যখন আপনি দেখেন প্রেসিডেন্ট এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন এবং এর অনেক দর্শকও আছে, আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি, আমেরিকা যে এ ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে কিম জং উন সে বার্তা পাচ্ছেন বলেই আমি নিশ্চিত করতে পারি।’
পিয়ংইয়ং ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সফলতা আছে বলেও দাবি করেন তিনি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক ভোটকে ইঙ্গিত করে পম্পেও বলেন, চীন উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সরে আসছে। তবে এখনো এ বিষয়ে বেইজিংয়ের আরও অনেক কিছু করার আছে বলেও মন্তব্য তার।
"