আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ডোকলাম থেকে বাহিনী সরিয়ে নিচ্ছে চীন
ডোকলামে চীনা বাহিনীর উপস্থিতি অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে যে দাবি ভারতের সেনাপ্রধান করেছেন, সে-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেল চীন। শুধু পুরোনো অবস্থানে অনড় থেকে চীন জানাল, ডোকলাম চীনেরই অংশ।
গত সোমবারই ভারতের সেনাপ্রধান বলেছেন, ডোকলাম থেকে নিজেদের বাহিনীর অনেকটাই প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীন। ২০১৭ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ডোকলামে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল ভারতীয় ও চীনা সেনা। চীন-ভারত-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত ডোকলামে দুই দেশের বাহিনীর সেই মুখোমুখি অবস্থান ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে বেশ নজিরহীন ঘটনা। ভুটানের এলাকায় ঢুকে চীন রাস্তা তৈরি করতে শুরু করেছিল বলে দিল্লি এবং থিম্পুর অভিযোগ ছিল। বেইজিং অবশ্য দাবি করেছিল, তারা নিজেদের এলাকাতেই রাস্তা তৈরি করছে। ভারতীয় সেনার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত রাস্তা তৈরি বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় বেইজিং। তারপরে ভারত ওই এলাকা থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করতে শুরু করে। চীন নিজেদের অংশে সেনা মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
কিন্তু সেই বাহিনীও এবার অনেকটাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে ভারতের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন। সে প্রসঙ্গেই গত মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং। কিন্তু সরাসরি জবাব তিনি দেননি। বরং এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রসঙ্গটি।
লু ক্যাং এ দিন শুধু বলেন, ডোকলামে মোতায়েন বাহিনী চীনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালন করছিল। কিন্তু চীনা বাহিনী এখনো সেখানে রয়েছে কি না, এখনো সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজ তারা চালিয়ে যাচ্ছে কি না, সে প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য তিনি করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ডং ল্যাং (ডোকলাম) এলাকা বরাবরই চীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ত্রিদেশীয় সীমান্তের কাছে অবস্থিত ডোকলাম অঞ্চলকে নিজেদের দেশের অঙ্গ বলেই দাবি করে ভুটান। ভারতও সেই দাবিরই সমর্থক। কিন্তু চীন ভুটানের দাবিকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। সে কারণেই ডোকলামে একতরফা আগ্রাসন দেখিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করেছিল চীন। ভারত যে সশস্ত্র বাহিনী পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ করবে, তা সম্ভবত চীন আন্দাজ করেনি।
ডোকলামকে কেন্দ্র করে নজিরহীন সংকট ঘনালেও, চীন যে এখনো পুরোপুরি সতর্ক হয়নি, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গত ডিসেম্বরে। অরুণাচল প্রদেশের টুটিং এলাকায় ঢুকে রাস্তা তৈরি শুরু করেছিল চীন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভারতীয় বাহিনী। রাস্তা তৈরি রুখে দেয়, বাজেয়াপ্ত করা হয় চীনা কনস্ট্রাকশন পার্টির নির্মাণ সরঞ্জামগুলোও। তা নিয়ে ফের ভারত-চীন সীমান্ত উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ডোকলামের মতো প্রলম্বিত জটিলতা সম্ভবত আর চাইছে না বেইজিংও। তাই অরুণাচল সীমান্তে আয়োজিত ব্রিগেডিয়ার স্তরের বৈঠকে চীনা বাহিনী প্রতিশ্রুতি দেয়, এলএসি লঙ্ঘন না করার বিষয়ে সতর্ক থাকবেন তারা। ভারতও চীনের নির্মাণ সরঞ্জাম ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়।
"