রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার এসআই জিল্লুর রহমান নিজেকে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদের ভাই পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদক ব্যবসার বিভিন্ন স্পট থেকে মাসোয়ারা আদায়, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের ছাড়া-ধরাসহ বিভিন্নভাবে তার মাসিক আয় দশ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মামলা-হামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করবেন বলে হুমকি দেন তিনি। এ কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পায় না। তবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ডাহা মিথ্যা।’
‘এসআই জিল্লুরের দম্ভোক্তি, আমি এসপি হারুনের ভাই, আমি কারো পরোয়া করি না, আমার ইচ্ছে মতো আমি কাজ করব, কেউ আমাকে বদলি করতে পারবে না, এমপি-ওসির বেল নাই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসআই জিল্লুর রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ডাকাত, হত্যা মামলার আসামিসহ অপরাধীদের সঙ্গে তিনি সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বেশ কয়েকটি এলাকার অপরাধীদের সঙ্গে এসআইয়ের সখ্য থাকায় ওইসব এলাকায় অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়ে গেছে। তার এসব কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ এই থানায় কর্মরত সব পুলিশ সদস্য। তারা ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর রাতে কেয়ারিয়া এলাকার সমর আলীর ছেলে রুবেল হোসেন ও কাদির মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন মাদকসেবী মদ পান করে এলাকাবাসীকে গালিগালাজ শুরু করে। এসব মাদকসেবীর জন্য স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে মাতলামো করার সময় হাতেনাতে রুবেল হোসেন ও রুবেল মিয়াকে গ্রেফতার করে এসআই জিল্লুর। এরপর রাতেই ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয়দের মাঝে পুলিশকে নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বাড়িয়াছনি এলাকার আত্তার কাদিরের ছেলে কামাল মদ বিক্রেতা। প্রতিদিন কামাল হোসেনের কাছে মাদকসেবীরা ভিড় জমায়। আর এ মদের স্পট থেকে মাসোয়ারা দিয়ে থাকেন জিল্লুরকে। গুতিয়াবো এলাকার আহাম্মেদ আলীর ছেলে বেলায়েত, আবদুর রহমানের ছেলে লোকা, আগারপাড়া এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে তারেক, ছনি এলাকার গৌরাঙ্গের ছেলে রাফি, বাগের আগলা এলাকার মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে সোহেলের মাদকের স্পট থেকেও নিয়ে থাকেন মাসোয়ারা। এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই। এসব কারণে ওইসব এলাকায় দিন দিন অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জ থানায় যোগদানের পর থেকেই এসআই জিল্লুর রূপগঞ্জের প্রায় ৫৮টি মাদক স্পট তার নিয়ন্ত্রণে নেন। প্রতিটি স্পট থেকে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা মাসোহারা আদায় করা হয়। সে হিসাবে শুধু মাদকের স্পট থেকেই প্রতিমাসে মাসে আয় হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। এছাড়া সাধারণ লোকজনকে বিভিন্ন কায়দায় আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত জিল্লুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে বলেন, আমি কারো পরিচয় নিয়ে এখানে চাকরি করছি না। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত করে অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে অব্যশই জিল্লুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"