প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
হাড় জিরজিরে মেরুভালুক!
কখনো কখনো একটি ছবি কোনো বড় সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। ইরাক যুদ্ধে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে একটি শিশুর কান্না বা সুদানে দুর্ভিক্ষের সময়ে শিশুর পেছনে শকুনের ঘুরে বেড়ানো। তেমনই হাড় জিরজিরে এক মেরুভালুকের ভিডিও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বের টনক ফের নড়িয়ে দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেরু অঞ্চলে বরফ গলছে। ইতোমধ্যেই সেখানকার প্রাণীরা বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বলে বারবার সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তর মেরু অঞ্চলের পরিস্থিতির ছবি তুলতে সেখানে গিয়েছিলেন নেচার ফটোগ্রাফার ও জীববিশেষজ্ঞ পল নিকলেন। কানাডার সমারসেট দ্বীপে একটি মেরু ভালুককে দেখে চমকে ওঠেন নিকলেন ও তার সহযোগীরা। লোম ঝরে গেছে তার। চেহারাও একেবারে রোগা। একটা মরচে ধরা খাবারের কৌটায় খাবার খুঁজছিল ভালুকটি। পরে একটা পড়ে থাকা স্নোমোবিল গাড়ির সিট চিবোতে শুরু করে। ৪০০ ফুট দূর থেকে ভালুকটির ভিডিও করেন নিকলেন ও তার সহযোগীরা।
নিকলেন জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এই বিশেষ ভালুকটির খাদ্যের অভাব হয়েছে কি না তা তার জানা নেই। তবে মেরুভালুক ক্ষুধার্ত হলে তার চেহারাটা কেমন হয় সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
ওই এলাকারই ব্যাফিন দ্বীপে নিকলেনের বাড়ি। তার কথায়, ‘এমন অবস্থায় কোনো ভালুককে দেখিনি।’ নিকলেন ও ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ পত্রিকার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভালুকটির ছবি প্রকাশের পরে হইচই পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মেরুভালুক ক্রমশ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠছে। ২০১৫ সালেও একটি ক্ষুধার্ত ভালুকের ছবি নিয়ে হইচই হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচারে একটি মেরু ভালুকের কার্টুন ব্যবহার করেছিলেন সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট আল গোর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু এলাকার বরফ গলছে। ফলে মেরুভালুকের বাসস্থান ও শিকারের এলাকা কমছে। একটি মেরুভালুকের প্রতি সপ্তাহে একটি সিলের মাংসের সমান খাদ্যের প্রয়োজন হয়। খাদ্যের অভাব ঘটলে মেরুভালুকরা ওই এলাকায় (আর্কটিক সার্কল) বসবাসকারী মানুষের বসতিতেও হানা দিতে পারে।
ইনস্টাগ্রামে নিকলেনের ভিডিওর দর্শকদের একাংশের অবশ্য দাবিÑবয়স হলেও ভালুকের চেহারা খারাপ হয়ে যায়। আমেরিকার ওরেগন চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা এবং মেরুভালুক বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড মুর জানিয়েছেন, ওই ভিডিও দেখে ভালুকটির বয়স বোঝার উপায় নেই। তবে পরিবেশ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যে মেরুভালুককে সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন তিনিও। নিকলেনকে অনেকে বলেছেন, ‘শুধু ভিডিও তুলেই ছেড়ে দিলেন। ভালুকটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেন না।’ তার জবাব, ‘আমরা তো আর ২০০-৩০০ পাউন্ড সিলের মাংস নিয়ে মেরু অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করি না।
"