প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

ঘরের বাইরের কৃত্রিম আলোয় ‘হারিয়ে যাচ্ছে’ রাত

রাতের পৃথিবীর ছবি নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম আলো ও এর উজ্জ্বলতার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। কেবল ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যেই ঘরের বাইরে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার প্রতি বছর ২ শতাংশ হারে বেড়েছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে আগের সেই রাতের অন্ধকার। বিদ্যুতায়িত এলাকার মানুষ ভুলে যাচ্ছে চন্দ্রিমা রাতের সেই সুন্দর রাতের কথা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এলইডি ও ফ্লুরোসেন্ট বাতির অতি ব্যবহারে অনেক দেশ থেকেই ‘রাত হারিয়ে যাচ্ছে’। এর ফলে ‘উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের জীবন ধারণে’ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

রাতের আলোর উজ্জ্বলতা মাপতে বিশেষভাবে বানানো নাসার স্যাটেলাইট রেডিওমিটারের সাহায্যে এ গবেষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাতের উজ্জ্বলতার হারে তারতম্য দেখা গেছে বলেও গবেষণায় জানানো হয়েছে। ‘উজ্জ্বল রাতের’ জন্য বিশেষভাবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেনে গড়পড়তা একই রকম থাকলেও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার ও এর উজ্জ্বলতার পরিমাণ বাড়ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে রাতের উজ্জ্বলতার পরিমাণ কমে এসেছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে ঝকমকে উপকূল ও মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শহরগুলোতে রাতের আলো চমৎকার দেখালেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রবণতা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

২০১৬ সালে আমেরিকার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল, অতি তীব্র কিন্তু দুর্বল নকশার এলইডি বাতির নীল আলো মানুষের ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন মেলাটোনিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের বাতি ব্যবহার কমিয়ে আনতে বিভিন্ন কমিউনিটিকে উৎসাহিত করার কথাও জানিয়েছিল তারা। নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কৃত্রিম আলোরে কারণে নিশাচর পতঙ্গের কর্মকা- বদলে যায় এবং ফসলের পরাগায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধিক উজ্জ্বল এলাকার উদ্ভিদের মুকুল অন্য এলাকার তুলনায় সপ্তাহখানেক আগেই ঝরে যায় বলে যুক্তরাজ্যের এক গবেষণাতেও দেখা গেছে। শহর এলাকায় বাতির পরিমাণ বাড়ায় নিশাচর অভিবাসী পাখির আচরণেও ‘নাটকীয় পরিবর্তন’ এসেছে।

নাসার স্যাটেলাইট রেডিওমিটারের ছবি নিয়ে করা গবেষক দলের প্রধান জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের ক্রিস্টোফার কাইবা জানান, কৃত্রিম আলোর এ ব্যবহার পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সম্পদশালী ও শিল্পোন্নত শহরগুলো হলুদ আলোর সোডিয়াম বাতির বদলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি ব্যবহার শুরু করায় সেখানকার রাতের উজ্জ্বলতা কমবে বলে ধারণা করলেও তা হয়নি বলে জানান তিনি।

‘যুক্তরাষ্ট্রের উজ্জ্বলতা অনেকটা আগের মতো থাকলেও যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিতে উল্টো উজ্জ্বলতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে’-বলেন তিনি। স্যাটেলাইট রেডিওমিটার এলইডির নীল আলো চিহ্নিত করতে না পারায় ‘রাত কমে যাওয়ার’ পুরো চিত্রটি উঠে আসেনি বলেও মনে করা হচ্ছে। মানুষের চোখ ওই নীল আলো দেখতে পায়, এ কারণে তাদের ক্ষতির পরিমাণও ধারণার চেয়ে বেশি হচ্ছে বলে আশঙ্কা গবেষকদের। কৃত্রিম আলোর পরিমাণ এখন এতটাই বেড়েছে যে, ইউরোপে এখন রাতে প্রাকৃতিক আলো খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর বলে মন্তব্য করেছেন এক্সেটর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেভিন গেস্টন। কৃত্রিম আলো মানুষের দৃষ্টিসীমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এ ক্ষতি সহজে পূরণ হবে না বলেও শঙ্কা তার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শহর এলাকাগুলোতে রাতে অল্প আলোক ক্ষমতার বাতি জ্বালিয়ে দৃষ্টিসীমার ক্ষতি মোকাবিলা করা সম্ভব।

‘মানুষের দৃষ্টি আলোর প্রাচুর্যতার ওপর নির্ভর করে না। আউটডোরের উজ্জ্বল বাতি পরিহার করে কম আলোতেই আমরা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে পারি। এর মাধ্যমে জ্বালানিও সঞ্চয় করা যায়, যদিও আমাদের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশীয় কিংবা বৈশ্বিক কোনো স্কেলেই আমরা সে পথে হাঁটছি না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist