পাঠান সোহাগ

  ২০ নভেম্বর, ২০১৭

ঠান্ডায় রোগব্যাধি বাড়ছে শিশুরা আক্রান্ত বেশি

পাবনার সুজানগর উপজেলার চিকিৎসকের পরামর্শে ১২ দিন বয়সের শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা আনা হয়েছে। জাহিদ হাসান তার ভাতিজাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। শিশুটি ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছিল। তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. এম এম ইউসুফকে দেখালে তিনি বলেন, শিশুর নিউমনিয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হৃদরোগ ও রক্তস্বল্পতায় ভুগছে বাচ্চাটি। দ্রুত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে না রেখে প্রাইভেটে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাই বেশি, তাও আবার আক্রান্তের সংখ্যায় শিশু বেশি। মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি আছে মতিঝিলের নয় মাস বয়সী রাবেয়া। সঙ্গে আছে শিশুর মা। তিনি জানান, ‘দুই দিন আগে তার ঠান্ডা লেগেছিল। নাক দিয়ে পানি পড়ছিল। আজ সকালবেলা দু-তিনবার পাতলা পায়খানা হয়েছে। সঙ্গে বমিও করেছে। তারপর এ হাসপাতালে আনা হয়েছে।’ মোহাম্মদপরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে একই সমস্যায় পাঁচ বছর বয়সী তানিয়াকেও ভর্তি করা হয় এই হাসপাতালে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৪ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ছয় মাস বয়সের নিহাল ভর্তি আছে। এক সপ্তাহ আগে সে এসেছে গাজীপুর থেকে, সঙ্গে আছেন তার মা নাসিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে বাচ্চার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, নিউমোনিয়া হয়েছে। বুকের মধ্যে সারাক্ষণ ঘড় ঘড় শব্দ হয়। আর শুধু কান্নাকাটি করে।’ এ ছাড়া রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআরবি, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর মা ও শিশু হাসপাতাল, মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক এবং রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসারা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম মৌসুমি রোগ হয়। এ রকম রোগে শিশু ও বৃদ্ধারা বেশি আক্রান্ত হন। এবারও শীতের শুরুতে হাসপাতালগুলোয় জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস বা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা (হাঁপানি), সাইনোসাইটিস এবং টনসিলের সমস্যা নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতালের বহির্বিভাগে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিস, সাধারণ আমাশয়, রক্ত আমাশয় রোগীর সংখ্যাও আগের চেয়ে বাড়ছে। এসব রোগ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।

আইসিডিডিআরবির প্রধান চিকিৎসক ও ইউনিটপ্রধান ডা. আজাহারুল ইসলাম খান বলেন, শীতের শুরুতেই শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে ঠা-াজনিত রোগব্যাধি বাড়ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, কয়েক দিন আগেও এসব রোগীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। হঠাৎ করেই আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে এসব রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গত কয়েক দিন বৃষ্টির ফলে ঠা-ার মাত্রা কিছুটা বাড়ছে। এসব রোগে বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হয়। তিনি আরো বলেন, সর্দিজনিত রোগে নাক দিয়ে পানি পরা, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শরীর মেজমেজ করা, হালকা জ্বর ও ভাইরাস জ্বর, ডায়রিয়া বেশি দেখা যায়। গত এক মাসের মধ্যে আট বছর বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছে। প্রতিদিন এখানকার অ্যাজমা সেন্টারেই গড়ে ২০ জন করে রোগী আসছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৩৭৫ জন অ্যাজমা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, ৬৫০ শয্যার এই হাসপাতালে গরমের মৌসুমে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী আসে। তবে মাত্রাতিরিক্ত গরমে রোগীর সংখ্যা ৬৫০ পর্যন্ত হয়েছিল। কিন্তু এই কয়েক দিনে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন মেডিসিন বিভাগে গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০-এর মতো রোগী এসেছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ঠা-াজনিত রোগী। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল থেকে জরুরি রোগী প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন ভর্তি হয়।

গত সেপ্টেম্বর মাসে মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে এক হাজার ১৯৩ ও অক্টোবর মাসে এক হাজার ৩১৯ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া গত অক্টোবর মাসে মোহাম্মাদপুর মা ও শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়াজনিত কারণে ১০ জন এবং ব্রংকিউলাইটিস রোগ নিয়ে ২৪ শিশু ভর্তি হয়েছে। পুরান ঢাকার মহানগর মা ও শিশু হাসপাতালে অক্টোবর মাসে ৩৮৪ জন শিশু ঠা-াজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist