নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় জেপি বর্তমান সীমানার পক্ষে এলডিপি
সংবিধানের আলোকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি)। একই সঙ্গে সেনা মোতায়েন, সীমানা পুনর্বিন্যাস ও ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য জেপির প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) বিদ্যমান সংসদীয় আসনের সীমানার আলোকে নির্বাচন চায়। গতকাল সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংলাপ শেষ হয়েছে। এ সংলাপে নিবন্ধিত ৪০টি দল অংশ নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নিবন্ধন উচ্চ আদালতে স্থগিত থাকায় দলটিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসি।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দল দুটি আলাদা আলাদা সংলাপে বসে এসব প্রস্তাব দেয়। জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের এবং এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমদের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। জেপি ৮ দফা এবং এলডিপি ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমাদের বক্তব্য তো সংবিধানের বাইরে যাবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বারবার যেখানে আঘাত করা হয়েছে, সেখানে আমাদের একটা স্ট্যান্ড ছিল। আমাদের অবস্থান নির্বাচনের পক্ষে। সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেনা মোতায়েনে পক্ষে না আবার বিপক্ষেও না। সেনা বলে কোনো গোষ্ঠী বা জাতি এখানে নেই। সবাই মানুষ।
নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে কি না, জানতে চাইলে জেপি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আমাদের সংলাপ করি; আমরাই তো জাতি, বিজাতীয় নাকি?
পরে দলের মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, অর্থবহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাই। সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। তবে একটি বা দুটি রাজনৈতিক দল অংশ না
নিলে অর্থবহ হবে না, এমন নয়। ৭০-এর নির্বাচনে মওলানা ভাসানীর দল অংশ না নিলেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আগামীতেও এ রকম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ইসির একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে বলেছি। প্রশাসনের সহায়তায় সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
সহায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ইসির এখতিয়ারের বাইরে থাকায় তা নিয়ে কোনো মত দেয়নি জেপি। রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। জেপির ৮ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-সংবিধান অনুযায়ী ভোট, প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার না করা, সংসদীয় আসনে আগের সীমানা বহাল রাখা, রাজনৈতিক দলকে মনিটরিং করা, ভোটার তালিকা নির্ভুল করা।
অন্যদিকে বিকেলে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। সংলাপ শেষে অলি আহমদ বলেন, প্রতি ১০ বছর পরপর সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ব্যবস্থা করতে হয়। এটা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশেও এ ব্যবস্থা চালু নেই। এ জন্য ২০১৩ সালে যে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তিনি জানান, ভোটের ১৫ দিন আগে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনা তদারকি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরূপ ক্ষমতা দেওয়া জরুরি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার সুপারিশসহ ইভিএম চালুর বিষয়ে সবার মত নেওয়ার পক্ষে এলডিপি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান অলি আহমদ। তিনি লিখিত প্রস্তাবে বলেছেন, ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের ভোট ছাড়া অন্য নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত। ইসির রোডম্যাপ বিভ্রান্তিকর, সময়ক্ষেপণ ও অহেতুক অর্থ ব্যয়ের একটি প্রস্তাব। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা আরো স্পষ্ট হওয়া উচিত। ষোড়শ সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে রায়ে বলা হয়েছে। ইসিকে শক্তিশালী করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই। ইসি এখনো দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাতি আজ গভীর সংকটে নিমজ্জিত। এলডিপির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-সংসদ ভেঙে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের আগে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য এনআইডি বাধ্যতামূলক করা এবং নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তির বিধান রাখা।
"