প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বিবিসির প্রতিবেদন
অনলাইনে ‘ভুয়া খবর’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বে
অনলাইনে ভুয়া খবরের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে বলে বিবিসির এক জরিপে উঠে এসেছে। উদ্বেগ থাকলেও জরিপের বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী ইন্টারনেটের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। চলতি বছর বিশ্বের ১৮টি দেশে পরিচালিত এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৯ শতাংশ বলছেন, ইন্টারনেটে কোনটা ভুয়া খবর আর কোনটা সত্যি তা নিয়ে তারা সংশয়ে ভোগেন। এর মধ্যে ১৬টি দেশের বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী ভুয়া খবর ঠেকাতে গিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আনার বিরোধিতা করেছেন। তবে চীন ও যুক্তরাজ্যে জরিপের বেশির ভাগ বলেছেন, তারা ইন্টারনেটে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পক্ষে। ২০১০ সালেও একই রকম জরিপ করেছিল বিবিসি। এবারের ১৮টির মধ্যে ১৫টি দেশ আগেরবারের জরিপেও ছিল। এবারের জরিপের অংশগ্রহণকারীদের ৫৮ শতাংশ বলেছেন, ইন্টারনেটের ওপর কখনোই কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত না। আগের জরিপে এ মত দিয়েছিলেন ৫১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
চীনে ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার ধারণা সমর্থন করেছেন। আর যুক্তরাজ্যে এই মত দিয়েছেন ৫৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। যেসব দেশে নিয়ন্ত্রণ আনার বিষয়ে ব্যাপক বিরোধিতা এসেছে তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে গ্রিস। সেখানে ৮৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ আনার বিরোধিতা করেছেন। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, কোনটি ভুয়া খবর আর কোনটি সত্য- সেই অস্পষ্টতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ব্রাজিলীয়রা। দেশটির উত্তরদাতাদের ৯২ শতাংশ এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপকমাত্রায় ভুয়া খবর চিহ্নিত করা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে; যার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ৯০ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ৮৮ শতাংশ এবং কেনিয়ায় ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা উদ্বেগের কথা বলেছেন। কেবল জামার্নিতেই সবচেয়ে কম ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন। দেশটিতে নির্বাচনকালীন সময়ে ‘ভুয়া খবর’ খুঁজে বের করে সরিয়ে দিতে সরকারের দৃঢ় প্রচেষ্টাও দেখা যায়।
গ্লোবস্ক্যান চেয়ারম্যান ডগ মিলার বলেন, “২০১৩ সালে অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) নজরদারির তথ্য ফাঁস করায় অনলাইনে মতামত প্রকাশে মানুষের আস্থা যেমন কমে গিয়েছিল, তেমনি ‘ভুয়া খবরের’ এই যুগ ইন্টারনেট তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কমাতে তাৎপর্যপূর্ণ হতে উঠতে পারে বলে জরিপে উঠে এসেছে।” অনলাইনে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রেও মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। যে ১৫টি দেশে দুবারই বিবিসি জরিপ করেছে তাতে দেখা যায়, মত প্রকাশে নিরাপদ বোধ করেন না এমন উত্তরদাতার সংখ্যা ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৩ শতাংশ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর মানুষের মনোভাবে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও উঠে এসেছে জরিপে।
নাইজেরিয়া, পেরু ও চীনের বড় একটা অংশ অনলাইনে মত প্রকাশে যতটা আত্মবিশ্বাসী, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় অনলাইন মত প্রকাশে তার চেয়েও বেশি উদ্বেগ দেখা যায়। ফরাসি ও গ্রিকরা অনলাইনে মন খুলে মত প্রকাশ করতে সবচেয়ে কম আগ্রহী। ইন্টারনেটের প্রতি নারী ও পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের বিষয়টিও জরিপে এসেছে। এখন পর্যন্ত পুরুষরা ইন্টারনেট ব্যবহারে বেশি স্বচ্ছন্দ্য। ছয় মাস ধরে অনলাইনে ছিলেন এমন পুরুষের সংখ্যা যেখানে ৭৮ শতাংশ, নারীদের সংখ্যা সেখানে ৭১ শতাংশ।
অনলাইনে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে পুরুষের চেয়ে নারীরাই বেশি অনিরাপদ বোধ করেন। উন্নত দেশগুলোতেই নারীদের এই উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। ফ্রান্সে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী অনলাইনে মত প্রকাশে নিরাপদ বোধ করেন। আর যুক্তরাজ্যে এই হার মাত্র ৩৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ শতাংশ। ব্রিটিশ পুরুষদের চেয়ে নারীরা ইন্টারনেটের ভুয়া কনটেন্ট নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। সেখানে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণও তারাই বেশি দেখতে চান।
"