প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মঙ্গলের মতো পরিবেশে ৮ মাস আগ্নেয় দ্বীপে

মঙ্গল অভিযানের বছরটা আগেই ঘোষণা করে রেখেছে নাসা। কিন্তু মঙ্গলে পাড়ি দিয়ে অভিযাত্রীরা যেন কোনো অসুবিদার মুখে না পড়েন, তার জন্য সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি। মূত্রের অণুগুলো ভেঙে তা থেকে খাবার তৈরি করা, টানা অনেক দিন ভারশূন্য থাকার পরীক্ষার পাশাপাশি আট মাস ধরে চলছিল ধৈর্যের এক দীর্ঘ পরীক্ষা। গতকাল শেষ হয়েছে তা।

পরিবার থেকে বহু দূরে জনমানবহীন পরিবেশে কীভাকে বাঁচতে পারে মানুষ, তা দেখতে গত জানুয়ারিতে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনা লোয়া নামে এক জনশূন্য দ্বীপে ডেরা বেঁধেছিলেন নাসার ছয়জনের একটি দল। দ্বীপটি আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যদিও আপাতত ঘুমিয়ে রয়েছে। টানা আট মাস সেখানে কাটিয়ে গত রোববার লোকসমাজে, চেনা পরিবেশে ফিরে এসেছেন তারা।

নাসার মতে, দীর্ঘদিন একা থাকতে থাকতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারেন অভিযাত্রীরা। খাদ্যাভাবে পড়তে পারেন। সমস্ত বাধাবিঘœ পেরিয়ে ভিন্নগ্রহে নামতে গিয়ে মহাকাশযানের কোনো ক্ষতি হলে, মেরামতির কাজটিও সারতে হবে এই নভোচারীদেরই। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে লাল মাটিতে চাষ-বাস, বেঁচে থাকার খুঁটিনাটি জানতে হবে সবারই। আর তার জন্য শক্ত ও সুস্থ রাখতে হবে মন। সে কারণেই মনোসমীক্ষার এই দীর্ঘ পরীক্ষাটি যৌথভাবে চালিয়েছে নাসা ও হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়। জনহীন দ্বীপে ১২০০ বর্গফুটের উল্টানো বাটির মতো দেখতে একটি বাড়ি। গত কমাস সেখানেই কাটিয়েছেন চারজন পুরুষ ও দুই মহিলা গবেষক। বাড়িটিতে ছোট দুটি ঘর, ছয়জনের ছোট ছোট ছয়খানা ঘুমানোর জায়গা, একটি রান্নাঘর, গবেষণাগার, স্নানের ঘর ও দুটি শৌচাগার। মঙ্গল গ্রহের বায়ুম-লের কথা মাথায় রেখে সবাই এই আট মাস স্পেসসুট পরে কাটিয়েছেন। বাড়ি থেকে বেরোলে, সব সময় বেরিয়েছে দল বেঁধে। লালগ্রহে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অন্নসংস্থান। হাওয়াই-পরীক্ষায় সে কাজটি করেছেন দলের জীববিজ্ঞানী জোশুয়া এহরিল্চ। ফলিয়েছেন গাজর, গোলমরিচ, বাঁধাকপি, সরিষা, টোমেটো, আলু ও পার্সলে। মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে কোনো সিগন্যাল পৌঁছায় ২০ মিনিটে। মৌনা লোয়া দ্বীপেও ছিল সেই ব্যবস্থা।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিম বিনস্টেড বলেন, ‘একটা কথা আমাদের জানাই ছিল, ছয়টা লোক একসঙ্গে থাকলে ঝামেলা বাঁধবেই। আমাদের সেরা দল পাঠালেও এটা হবেই। তাই মঙ্গলে এমন একটা দল পাঠাতে চাইছি, যারা ঝগড়া করলেও শেষমেশ নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিতে পারবে। সেই বোঝাপড়াটা যাতে একে অপরের সঙ্গে থাকে।’ গত আট মাস তারই মহড়া দিয়েছেন জোশুয়া এহরিল্চ, লরা লার্ক, স্যামুয়েল পেলার, ব্রায়ান র‌্যামোস, জেমস বেভিংটন ও অ্যানসলে বার্নার্ড। তাদের মেজাজ-মর্জি সামলাতে সাহায্য নেওয়া হয়েছে যন্ত্রের। কথাবার্তা ও উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ সেন্সর। গলার স্বর চড়লেই যন্ত্র সজাগ করে দিয়েছে, ‘শান্ত হও’। এমনকি, কেউ যদি কারো সঙ্গে কথা না বলে কিংবা চুলোচুলি করে, সেটাও ধরা পড়েছে যন্ত্রে। সেই মতো বার্তা দিয়েছে। সম্প্রতি এক ভিডিও মেসেজে লরা বলেছিলেন, ‘এসব সমস্যা তো থাকবেই, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই সব বাধা পেরোনো যাবে। আমরাই সেটা করে দেখাব।’ কতটা পেরেছেন তারা? লারারা ফিরে আসার পরে, চলছে তারই বিশ্লেষণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist