উখিয়া ও টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে বেশির ভাগ রোহিঙ্গার। তাদের সঙ্গে থাকা শিশুদের অবস্থা আরো ব্যাপক হুমকি হয়ে পড়ছে। এদিকে গত রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া মৌসুমি বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় নারী ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদিকে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বিশেষ ইপিআই কর্মসূচি চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। উখিয়া উপজেলার সবকটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ২৪টি ইপিআই বিশেষ সেন্টারে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি। রোহিঙ্গা শিশুদের হাম, পোলিও, রুবেলা ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে। রোহিঙ্গা মায়েরা না খেয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে বাংলাদেশে আসায় তাদের অবস্থাও গুরুতর। এ কারণে শিশুকে বুকের দুধ দিতে না পারায় শিশুদের অবস্থা হাড্ডিসারে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার শিশুর শরীর জ্বরে পুড়লেও কোলে নিয়ে বসে থাকা ছাড়া মায়েদের কিছু করার নেই। তার ওপর সবখানে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় শিশুদের অবস্থা আরো চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকলেও বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য এ সেবা নিতান্তই অপ্রতুল বলে জানা গেছে। গতকাল সকাল থেকে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও হাকিমপাড়াসহ কয়েকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ। এদের মধ্যে অনেক শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। জরুরিভিত্তিতে এসব শিশুর সাহায্যের দরকার। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুর ঝুঁকিতে থাকার কথা জানিয়েছে।

জাতিসংঘের এ সংস্থার শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্যঁ লিবি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ইউনিসেফের সহায়তায় জরুরি সামগ্রী কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ক্যাম্পগুলোয় সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।

উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার রবিউর রহমান রবি জানান, অপরিচ্ছন্ন পানি ব্যবহার করলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশুরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ডায়রিয়া ও আমাশয় আক্রান্ত হয়ে উখিয়া হাসপাতালে আসা প্রতিদিন অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশু ও বৃদ্ধকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন আবদুস সালাম জানান, রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৩২টি মেডিক্যাল ক্যাম্প কাজ করছে। এসব ক্যাম্পে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রওশন এরশাদ : কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কথা শুনলেন বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। গতকাল সোমবার তিনি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, মিয়ানমার যা করছে তা মুসলমানদের ওপর চরম নির্যাতন। শিবির পরিদর্শন শেষে তিনি সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেন।

স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির প্রিসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদ, কক্সবাজার জাতীয় পার্টির এমপি হাজী মৌলভী ইলিয়াছ, খুরশিদা হক এমপি, মেহেজাবিন মুরশেদ এমপি, জেলা সম্পাদক মুফিজুর রহমান মুফিজ, উখিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল আমিন সিকদার তার সঙ্গে ছিলেন।

দালাল গ্রেফতার : মিয়ানমার সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়া এলাকার রুস্তম আলী নামের এক দালালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার বশির আহমদের ছেলে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার তাকে আটক করা হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে সর্বস্ব হারিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয় ঘুমধুম বেতবুনিয়া এলাকায়। দুর্বলতার সুযোগে প্রভাব বিস্তার করে জায়গার ভাড়ার নামে প্রতি পরিবার থেকে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা নেন দালাল রুস্তম আলী।

দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রুস্তম আলী নামের এক দালালকে গ্রেফতার করে ঘুমধুম পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist