নিজস্ব প্রতিবেদক ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রেল বন্ধ
আজ সকালের মধ্যে ট্রেন চালুর আশ্বাস রেলমন্ত্রীর
বন্যায় টাঙ্গাইলে রেলপথের একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন। এদিকে, কালিহাতী উপজেলার পৌলী রেলসেতুর অ্যাপ্রোচের (সংযোগের) ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মেরামতকাজ গতকাল দুপুরে পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সোমবার (আজ) সকালের মধ্যে এই পথে পুনরায় ট্রেন চলাচল চালু করা সম্ভব হবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন গতকাল সকালে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সাংবাদিকের জানান, ‘ট্রেনে চলাচলের কোনো ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত ওই পথে ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন ছাড়বে না।’
টাঙ্গাইল রেলস্টেশনের মাস্টার জালাল উদ্দিন জানান, বন্যার পানির স্রোতে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভায় পৌলী রেলসেতুর দক্ষিণ অংশের অ্যাপ্রোচের প্রায় ২০ ফুটের মতো জায়গায় মাটি সরে গেছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী ‘একতা এক্সপ্রেস’, নীলফামারী থেকে ছেড়ে আসা ‘নীলসাগর’ এবং রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে। আর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ টাঙ্গাইলে আটকা পড়ে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ এবং কলকাতাগামী ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ লাইন বন্ধ থাকার খবর পেয়ে আর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়নি। ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসের আগামী দুই দিনের যাত্রাও বাতিল করা হয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন ট্রেনের
যাত্রা বাতিল হওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ টিকিট ফেরত নিলেও স্টেশনে আসা যাত্রীরা বিপাকে পড়ে। মাকে নিয়ে একতা এক্সপ্রেসে টাঙ্গাইলে যাওয়ার জন্য কমলাপুরে এসেছিলেন এসএম শাহনেওয়াজ নামের একজন যাত্রী। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল ১০টায়। কিন্তু ট্রেন না পেয়ে বিকল্প পথের চিন্তা শুরু করেন তিনি। বলেন, ‘চার দিন আগে টিকিট কিনেছি। এখন যেতে পারব না। বেশ বিপাকে পড়ে গেলাম। মহাখালী গিয়ে বাসে যেতে হবে।’ নাটোরে যাওয়ার জন্য একতা এক্সপ্রেসের টিকিট কিনেছিলেন মশিউর রহমান। ট্রেন না ছাড়ায় টিকিট ফেরত দেন তিনি। বলেন, ‘ট্রেন কখন চালু হবে, সেটাও জানি না। পুরো শিডিউল উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। পরিবার নিয়ে কিভাবে যাব, বুঝতে পারছি না। রাস্তার যা অবস্থা, বাসে যাওয়ার কথা তো চিন্তাই করতে পারি না।’
কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, যাত্রা বিলম্বের কারণে সকালে ৪টি ট্রেনের টিকিট তারা ফেরত নিয়েছেন।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইল রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার মো. জালালউদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওই এলাকা পার হয়। এরপরই মাটি ধসে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। রেলসেতুর দক্ষিণ পাশে প্রায় ২০ ফুট এলাকার মাটি ধসে গেছে। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, ধসে যাওয়ার পরপরই নীলফামারী থেকে ঢাকাগামী ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ সেতু এলাকায় আসে। ওই সময় স্থানীয় লোকজন লাল কাপড় উড়িয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেয়।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। ঢাকা ও পাকশী থেকে প্রকৌশলীরা এসে মেরামতকাজ শুরু করেছেন।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত পৌলী রেলসেতুর মেরামতকাজ দেখতে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, সোমবার (আজ) সকালের মধ্যেই মেরামতকাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হবে। এজন্য রেলকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মানুষের স্বচ্ছন্দে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে যা কিছু করা দরকার, তার সবই করা হচ্ছে।
"