আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী সংঘাতে নিহত ৩, বিপাকে ট্রাম্প প্রশাসন
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার শার্লোটসভিল শহরে চরম ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী আর বর্ণবাদবিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক সহিসংতার ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এদিকে, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের বর্ণবাদী কর্মকান্ডের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘নমনীয় অবস্থান’ নিয়েছেন বলে তার দলের ভেতরে-বাইরে অভিযোগ উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, ভার্জিনিয়ার সাম্প্রতিক উত্তেজনায় সরাসরি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়বাদীদের দায়ী করতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প।
বিবিসি জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালের দিকে ভার্জিনিয়ার শার্লোটসভিল শহরে কনফেডারেট পতাকা, বর্ম আর হেলমেট পরে একটি মিছিল বের করে চরম ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা। গৃহযুদ্ধের সময়কার জেনারেল রবার্ট ই লি-র একটি ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই মিছিলের আয়োজন করে ডানপন্থিরা। ১৮৬১-৬৫ সালের গৃহযুদ্ধে দাসত্ব প্রথার পক্ষে লড়াইকারী কনফেডারেট বাহিনী পরিচালনা করেন জেনারেল লি। বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনগুলোও এ সময় আলাদা মিছিল বের করে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শহরে অনেক রাস্তায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, বিরোধী কর্মীদের একটি সমাবেশের ওপর চলন্ত গাড়ি তুলে দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে একজন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। পরিস্থিতি সামলাতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। পরে ঘটনা পর্যবেক্ষণে ভার্জিনিয়া পুলিশের মোতায়েন করা একটি হেলিকপ্টার শহরটির কাছে বিধ্বস্ত হলে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন।
এ সমাবেশের জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই পক্ষই একে অপরের ওপর বোতল, পাথর ছুড়ে মারে। এমনকি তারা পিপার স্প্রেও ব্যবহার করে। এর আগে শুক্রবার রাতেও মশাল মিছিল বের করেছিল শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা। যদিও শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু এখনো অনেক স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, শনিবার নিউ জার্সিতে দেওয়া ভাষণে ভার্জিনিয়ার ঘটনাকে সংঘর্ষ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘অনেক পক্ষের বিদ্বেষ, গোঁড়ামি এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছি।’ পরে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র ট্রাম্পের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যেকোনো উৎস ও যেকোনো পক্ষ থেকে সৃষ্ট বিদ্বেষ, গোঁড়ামি এবং সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। গতকাল বিক্ষোভকারী ও বিক্ষোভবিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।’ তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর দল-মত নির্বিশেষে তার সমালোচনা চলছে। ট্রাম্পের এ নিন্দাকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না তারা। ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও ট্রাম্পকে নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে সরাসরি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কোলোরাডোর রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডনার টুইটারে লিখেছেন : ‘হে প্রেসিডেন্ট, আমরা অবশ্যই শয়তানদের তাদের নামেই ডাকব। ওই ঘটনাটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ ছিল এবং শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাধীরা সে হামলা চালিয়েছে।’ একইভাবে ইউটার সিনেটর অরিন হ্যাচও টুইটারে লিখেছেন, ‘শয়তানকে তার নামেই ডাকা উচিত। দেশের ভেতরকার নাৎসি ধারণাকে চ্যালেঞ্জহীন রেখে কেবল হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রাণ দেননি।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভাইকে হারিয়েছেন অরিন। বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যেসব ঐতিহ্যের জন্য আমেরিকান পতাকা মাথা সমুন্নত রেখেছে তার পরিপন্থী শার্লোটসভিলের ওই মিছিল ও সমাবেশ। ট্রাম্পের উচিত অবিলম্বে এবং কঠোরভাবে এর নিন্দা জানানো।’
"