শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ২৮ জুলাই, ২০১৭

চট্টগ্রামে বৃষ্টি জলাবদ্ধতা

সড়ক ও খাতুনগঞ্জে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রাম এখন দুর্ভোগের আরেক নাম। গত কয়েক দিন হয়েছে টানা বৃষ্টি। সেই সঙ্গে ছিল জোয়ারের পানি। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নষ্ট হয়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য। পচে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে গতকালও বৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ছিল নগরীর বিভিন্ন এলাকা। পানি না নামায় দুর্ভোগ কাটেনি নগরবাসীর। দিনের পর দিন এমন বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, খাতুনগঞ্জসহ বেশ কিছু এলাকা। জোয়ারের সময় এসব এলাকায় ঘর থেকে বের হতে পারেননি অনেকেই।

এদিকে, দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ জলাবদ্ধ হওয়ার কারণ ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ বলে পরিচিত চাক্তাই খাল। জোয়ারের সময় এই খাল উপচে পানি ওঠে; কিন্তু ভাটায় নামে না সেই পানি। আর বৃষ্টির পানি ধারণ করতে না পেরে ভাসিয়ে দেয় নগর।

জোয়ারের পানিতে প্রায় সময়ই ভাসছে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। আর তাতে ব্যবসা লাটে উঠছে ব্যবসায়ীদের। পানিতে ভিজে পণ্য নষ্ট হওয়ায় লোকসান দিয়ে ইতোমধ্যে কেউ কেউ হয়েছেন সর্বস্বান্ত। জোয়ারের পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে একেকটি প্রতিষ্ঠানের তিন লাখ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। সেখানে ৫০০ কোটি টাকার বেশি নিত্যপণ্য নষ্ট হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

চার-পাঁচ বছর ধরে বছরের আট মাস জোয়ারের পানিতে দেড়-দুই ফুট ডুবে থাকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। শুরুর দিকে ক্ষতির অভিজ্ঞতা থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানের সামনে তিন-চার ফুট উঁচু দেয়াল তুলেছিলেন। কিন্তু এই বাড়তি দেয়াল এখন আর পানি ঠেকাতে পারছে না। দিন দিন পানির স্তর বাড়তে বাড়তে তা পাঁচ-ছয় ফুটে দাঁড়াচ্ছে। দেয়াল উপচে পানি ঢুকছে আড়তে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘুরে চাল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, নারকেল, মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্য দেখা যায়। কিছু কিছু দোকানের ডাল, চিনি ও সাবান গলে গেছে পানিতে। শুঁটকিপট্টি, ডালপট্টি, তেলপট্টি গলির বিভিন্ন দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানিতে। এসব দোকানের কর্মচারীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তাদের পণ্য রক্ষার।

চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ী নেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এবারের টানা বর্ষণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার কারণে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রবল জোয়ারে খাতুনগঞ্জের তিন হাজার দোকান তলিয়ে এক দিনেই প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। গতকাল দুপুরে বৃষ্টির সময়ও পানি উঠেছে। এভাবে চলতে থাকলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ছেড়ে ব্যবসায়ীদের পালাতে হবে।

মেসার্স ফরহাদ ট্রেডিংয়ের স্বত্ব¡াধিকারী নুর মোহাম্মদ বলেন, গত কয়েক দিনের বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ক্ষয়ক্ষতির কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে, যা সবশেষে ভোক্তাদের ঘাড়ে পড়বে।

চাক্তাইয়ের চাল ব্যবসায়ী ওমর আজম বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সাড়ে তিন হাজারের বেশি দোকান আছে। ৯০ শতাংশ দোকানে পানি ঢুকে ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা অসম্ভব।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সৈয়দ সগীর আহমেদ বলেন, প্রতি বছর বর্ষাকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে। খাল-নদী সব দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে নিয়ে সরকারকে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে।

বন্দরে কনটেইনার ওঠানামা ঠিক থাকলে ও গোডাউন থেকে মালামাল সরবরাহ নিয়মিত হলে দাম বাড়ার শঙ্কা নেই জানিয়ে সৈয়দ সগীর বলেন, অনেক ব্যবসায়ীর মালামাল বন্দরে আটকে আছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় নিয়মিত মালামাল আসছে না। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে দাম বাড়ার কোনো শঙ্কা নেই।

এদিকে, খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা সমস্যা সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গে একমত নন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দাবি সঠিক নয়। তারা যত টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন, তত টাকার মাল তাদের কাছে নেই। পানিতে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বস্তা ফেলে রেখেছেন। ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করার জন্য এবং ইনস্যুরেন্স সুবিধা নেওয়ার জন্য তারা এসব বলছেন।

এদিকে, এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগরের সড়ক অবকাঠামো অনেকটা ল-ভ- হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ভাঙাচোরা সড়কে যানচলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরের অন্তত ৪০ শতাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির একটি প্রাথমিক হিসাবও দিয়েছে ওই সূত্র। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি সূত্রটির। ইতোমধ্যে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ শুরু হয়েছে। এর পরই প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টানা বর্ষণে নগরীর বেশকিছু সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার চেষ্টা করছি। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist