প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বিবিসির প্রতিবেদন
মিয়ানমারে সংসার ভাঙছে ধর্ষণের শিকার নারীদের
মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে মুসলিম গ্রামগুলোতে সৈন্যদের অভিযান থেকে বাঁচতে পুরুষরা সব পালিয়ে গিয়েছিল। তারা বাড়িতে রেখে গিয়েছিল শিশু, নারী আর বৃদ্ধদের। রোহিঙ্গা মুসলিম আয়মার বাগন যখন তার স্বামীকে জানান যে, তার গর্ভাবস্থার একেবারে শেষ পর্যায়ে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাকে গণর্ধষণ করে। এ কথা শুনে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে চেয়ে-চিন্তে জীবনধারণ করছেন আয়মার। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেদেশের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ সময় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বহু নারী। তাদের ঘর-সংসার ভাঙছে এখন। ধর্ষিতা নারীদের ঘর ছাড়া করছেন তাদের স্বামী-শ^শুর বাড়ির লোকেরা।
জাতিসংঘের আশঙ্কা, ওই অভিযান এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান। বিবিসি গতকাল বুধবার জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি’র সাংবাদিক সম্প্রতি মিয়ানমারের সরকার আয়োজিত একটি সফরে রাখাইন প্রদেশে গিয়ে আয়মার বাগনের সঙ্গে কথা বলেন। তখন জানা যায় রোহিঙ্গা নারীদের ওপর এই লোমহর্ষক নির্যাতনের কথা।
আয়মার বাগন কায়ার গং টং নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে বার্তা সংস্থার সংবাদদাতা সরকারি লোকজনের অজ্ঞাতসারে একদল রোহিঙ্গা মহিলার সঙ্গে কথা বলেন, যারা সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের কাহিনি বর্ণনা করেন ওই সংবাদদাতার কাছে।
‘সন্তান প্রসবের মাত্র কয়েকদিন আগে আমাকে ধর্ষণ করা হয়। আমার তখন নয় মাস চলছিল। তারা জানতো আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও দমেনি তারা,’ ছোট্ট একটি কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে এ কথা জানান আয়মার বাগন।
তিনি বলেন, ‘এটা ঘটবার জন্য আমাকে অভিযুক্ত করে আমার স্বামী। এ কারণে সে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে আরেক গ্রামে গিয়ে থাকছে এখন। আয়মার বাগনের বয়স মাত্র ২০। দুই সন্তানের মাতা হাসিন্নার বায়গনের বয়েসও ২০। তিনি বলেছেন, তাকেও পরিত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে তার স্বামী। কারণ গত ডিসেম্বরে তিনজন সৈন্য তাকে ধর্ষণ করেছিল। এসব ঘটনা যখন ঘটছিল তখন রাখাইনের গ্রামগুলো ছিল পুরুষশূন্য, রয়ে গিয়েছিল শুধু মহিলা, শিশু আর বয়স্ক মানুষরা। সৈন্যদের ধর্ষণ করবার এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে মিয়ানমারের সরকার। তবে সে সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭৪ হাজার রোহিঙ্গার অনেকেই জাতিসংঘ তদন্তকারী এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে যেসব অভিযোগ জানিয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে নারী নিপীড়নের কথাও ছিল। কায়ার গং টংয়ের রোহিঙ্গারা বলেছে, তাদের গ্রামে ১৫টির মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে তিনটি ধর্ষণের ব্যাপারে তারা মামলা করেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বাকিরা ভবিষ্যৎ হয়রানির আশঙ্কায় অভিযোগ জানাতে চায়নি। ‘কিছু মহিলা সমাজে সম্মানহানির ভয়ে অভিযোগ জানায়নি’, বলেছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সীমান্তের জাতিগত সংঘাতগুলোতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
"