প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ জুলাই, ২০১৭

ভেঙেছে বাঁধ, ভেসে গেছে ১০ হাজার মাছের ঘের

জোয়ার ও টানা বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাটের ১০ হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পেকুয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত পূর্ব উজানটিয়ার গোদারপাড় এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় তিন চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উঁচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকায় পানি বাড়ছে, লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে, বন্যার পানি নামতে থাকলেও রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙন বাড়ছে। এতে ভাঙন হুমকিতে পড়েছে অনেকগুলো স্কুল। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ

বাগেরহাট : জোয়ার ও টানা বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাটের ১০ হাজারের বেশি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার হাজার হাজার মৎস্যচাষি। এতে গলদা, বাগদা ও সাদা মাছের প্রায় ৫৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ঢুকে চিংড়ি ঘেরগুলোতে পানি থৈথৈ করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার বিপুল পরিমাণ চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে যাবে বলে আশংকা করছে সংশ্লিষ্ট ঘের মালিকরা।

বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ হাজার ৬৫০টি মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ৫৫ কোটি ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে মাছের ঘের তলিয়ে চাষীদের আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

এদিকে, একটানা ভারী বর্ষন ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা, গোটাপাড়া, বিষ্ণুপুর, যাত্রপুর ও কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকার শত শত হেক্টর সবজি ক্ষেত ও ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর সবজি ও ফসলি জমি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির পানিতে কৃষি জমির বীজতলা ও সবজি এবং পানের বরজ তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১৪৯৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

চকরিয়া (কক্সবাজার) : প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পেকুয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত পূর্ব উজানটিয়ার গোদারপাড় এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় তিন চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার শিলখালী, বারবাকিয়া, রাজাখালী ও টইটং ইউনিয়নের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাহাড়ি ঢলের ও জোয়ারের পানি উজানের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় মাতামুহুরী নদীসহ শাখা নদীগুলিতে এ পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে উপজেলার প্রধান সড়ক চকরিয়া-মগনামা সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে যায়। চকরিয়া-পহরচান্দা সীমান্ত ব্রীজ থেকে শিলখালী ইউনিয়নের হাজিরঘোনা সালাহ উদ্দিন ব্রীজ পর্যন্ত সড়কটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গত দুই দিন ধরে। উজান থেকে নেমে আসা পাহড়ি ঢলে মাতামুহুরীর নদীর প্রচ- ¯্রােতের আঘাতে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। গত মঙ্গলবার সরেজমিন বেড়িবাঁধের ভাঙন অংশে গিয়ে দেখা যায় পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন দু’পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এতে করে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়ার প্রায় এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির প্রবল ¯্রােতের আঘাতে উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়া ও গোদারপাড়া স্টেশনের অদূরবর্তী স্থানের দুইটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। ২৪ জুলাই দুপুরে গোদারপাড় কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন স্থানে মাতামুহুরী নদীর পয়েন্টে পৃথক বেড়িবাঁধের দুটি পয়েন্ট বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) : হাটহাজারীতে গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পুরো উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে প্রায় সব সড়ক। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে গাড়ি চলাচল।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আলম জানান, ধলই ইউনিয়নের কাজীপাড়া সংলগ্ন হালদার বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। হালদা নদীর এ অংশের বেড়িবঁাঁধ পুননির্মাণের জন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে বলে আসলেও অজ্ঞাত কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

রংপুর : তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় তীব্র আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন। ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে গঙ্গাচড়ার লক্ষিটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিস্তার চরাঞ্চলের বিন্নাবিনা চরের বিনবিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শংকরদহ জাগরণী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষিটারী-শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এদিকে, তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ইতোমধ্যে লক্ষিটারী ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলের প্রায় ৩০০ পরিবার তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এখনো হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় ২০০ ঘরবাড়ি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist