কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারে ডুবে আছে ৪০০ গ্রাম
প্রবল বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদর উপজেলা। এসব উপজেলার চার শতাধিক গ্রাম এখন পানির নিচে। এরই মধ্যে অনেক বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ভেসে গেছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে অনেক মানুষ ফের দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। তাদের মধ্যে বাসস্থান, খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ফের ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চারদিন টানা বৃষ্টিপাতে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে উজানটিয়া গোদারপাড়া স্টেশনের অদূরবর্তী স্থানে দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে উজানটিয়ার সুতাচোরা, গোদারপাড়া, দক্ষিণ সুন্দরীপাড়া, নুরীর পাড়া, রুপালীবাজার পাড়া, দক্ষিণ সুতাচুরা, মালেকপাড়া, ঠা-ারপাড়া ও আতরআলী এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে।
উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিতে বন্দি। কেউ যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে না। সবাই দুর্ভোগে আছে। এ ছাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে শিলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নও পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলের পানি উজানের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলার প্রধান সড়ক চকরিয়া-মগনামা সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার বিলীন হয়ে গেছে। চকরিয়া-পহরচান্দা সীমান্ত ব্রিজ থেকে শিলখালী ইউনিয়নের হাজিরঘোনা সালাহ উদ্দিন ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিও ভেঙে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে গত তিন দিন ধরে।
জোয়ারের পানিতে ফের প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়ন। ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব-পশ্চিম গোমাতলীর বিভিন্ন এলাকার ২ শতাধিক বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, ফসলের খেত, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া সদর উপজেলা গেটে দুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। ডুবে রয়েছে উপজেলা গেটের সামনের সড়ক। এতে কক্সাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিবহনগুলো চলাচলে বিঘœ হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে গোমাতলির ৬ নং সøুইস গেটের বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কোনো সংস্কার না হওয়ায় জোয়ারের পানিতে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা তলিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, রোয়ানুর তা-বে ল-ভ- হয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জোয়ার ভাটায় চলছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম। এখনো ডুবে রয়েছে উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। এবিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান বলেন, জরুরি বরাদ্দ দিয়ে বেড়িবাঁধের সব ভাঙনগুলো পুনঃনির্মাণ করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, প্রবল বর্ষণে মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা বাড়িঘর ও ফসলি জমি। মহেশখালী উপজেলার পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা ঘাট ভেঙে গিয়ে খ- খ-ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে চার দিন ধরে। জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে মহেশখালীর পৌরসভা, কুতুবজোম, ঘটিভাঙা, ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী শাপলাপুর, মাতারবাড়ী, হোয়ানক ও ধলঘাটার নিচু এলাকায় প্লাবিত হয়েছে।
রামু উপজেলায়ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে পানি বাঁকখালী নদীর বিপৎসীমা অতিক্রম করে গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ দিয়ে ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, কাওয়ারখোপ ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সব নিচু এলাকা ডুবে রয়েছে। এতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ডুবে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, বৃষ্টি আরো দুয়েক দিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা প্রশাসক (অতিরিক্ত) সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে। তারপরও প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। অবস্থা খারাপ হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
"