জালাল হোসেন মামুন, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন প্রকল্প
ঠিকাদারের বিরুদ্ধে জোর করে মাটি ভরাটের অভিযোগ
রেলওয়ের আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন প্রকল্পের আওতায় মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ না করেই সীমানা বসিয়ে জোর করে জমি ভরাটের চেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ। এ কারণে সীমানা নির্ধারণ ও ভূমির ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানিয়ে রিসেটেলম্যান্টে আবেদন করেছেন ভূমির মালিকারা। এ ছাড়া তমা গ্রুপের লোকজন আখাউড়ার নয়াদিল এলাকার ৩০টি পরিবারের অনেক গাছ কেটে ফেলেছে। এর প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা। তবে তমা গ্রুপের প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার রহমান জানিয়েছেন, তারা নিয়ম মেনেই রেলওয়ের জায়গায় কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রেলওয়ের আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে তমা গ্রুপ। আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার আলী আজ্জম চৌধুরী ও আলী আকবর চৌধুরী দেবগ্রাম মৌজায় ১০০ বছরেরও অধিক পুরনো তিন একর ২১ শতাংশ (১০৫০ দাগ) পুকুর ভূমি ১৯৬৫ সনে ক্রয় করেছেন। তাদের নামে ২১৯ ও ২২৪ নং বিএস চূড়ান্ত খতিয়ান আছে। ওই পুকুরটিতে ১২ লাখ টাকার অধিক মাছ রয়েছে।
ওই পুকুরের পশ্চিমাংশে রেলওয়ের কিছু অংশ রয়েছে। রেলওয়ের অংশের সীমানা দেওয়া রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই সীমানাকে বাদ দিয়ে মালিকানাধীন ভূমির ৪৫ শতাংশ অংশে সীমানা দিয়েছে এবং পুকুরটিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি ভরাটের চেষ্টা করছে।
আলী আজ্জম চৌধুরীর ছেলে আজাদ হোসেন চৌধুরী এবং আলী আকবর চৌধুরীর ছেলে চৌধুরী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, রেলওয়ের জমির সীমানা দেওয়া আছে। সেই সীমানা না মেনে আমাদেরকে না জানিয়ে আমাদের মালিকানাধীন প্রায় ৪৫ শতাংশ পুকুরে সীমানা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ করলে আমাদেরকে চিঠিপত্র দেবে তাও দেয়নি। আমরা পুকুরটিতে ১২ লাখ টাকা খরচ করে মাছ চাষ করেছি। সেইগুলো মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বলেন; প্রতিকার চেয়ে আমরা রিসেটেলম্যান্টের উপপরিচালকের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
এদিকে, আখাউড়ার নয়াদিল এলাকায় ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোর পূর্বক গাছ কাটার অভিযোগ করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। গত রোববার সকালে নয়াদিল হান্নান মিয়ার বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। অভিযোগ করা হয়, এভাবে জবরদস্তিমূলক গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ায় ফলে এর মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন না। গাছ কাটতে বাধা দিতে গিয়ে গাছের প্রকৃত মালিকরা হুমকি-ধমকি এমনকি শারীরিকভাবে নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন। এ সংবাদ সম্মেলনে নয়াদিল গ্রামের হান্নান মিয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের লোকজন ওই এলাকার অন্তত ৩০টি পরিবারের বিভিন্ন গাছ কেটে ফেলেছে। গত ১৫ জুলাই তিনি গাছ কাটতে বাধা দিলে মামলার ভয় দেখায়। গাছ কাটার সময় চাপা পড়ে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এলাকার নজরুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, শাহজাহান মিয়া অভিযোগ করেন, তাদের বেশ কিছু গাছ, বাঁশঝাড় কেটে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তারা জানিয়েছে, গাছের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। অথচ জমি অধিগ্রহণ ও গাছের হিসেব নিকেশ করার সময় তাদেরকে বলা হয়েছিল এসবের ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে গাছ কেটে ফেলছে। এ কারণে এখানকার দরিদ্র লোকজন ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
তমা গ্রুপের প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনেই রেলওয়ের জায়গায় কাজ করছি। অন্যের জায়গায় কাজ করছি না। এক বছর আগেই রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কোনো চিঠি না দিয়েই মাটি ভরাটের বিষয়ে তিনি বলেন; কাউকে চিঠি দেওয়ার দায়িত্ব তাদের নেই। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই আমরা গাছ কেটেছি। তবে এগুলো আমরা নিয়ে আসিনি। কাটা গাছগুলো এখনো সেখানেই রয়েছে। নিয়ম অনুসারে এসব গাছের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। তবু এলাকাবাসীর যদি কোনো কথা থাকে তাহলে আমাদেরকে বলতে পারে।’ আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের উপপরিচালক (রিসেটেলম্যান্ট) মো. আনিসুর রহমান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কারো মালিকানাধীন ভূমি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে না। নিয়ম অনুযায়ী, যে রকম ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য তাকে সে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ।
"