গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
নিম্নমানের সামগ্রী : ভেঙে পড়ল নির্মাণাধীন সেতু
গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের সুরিয়া নদীতে ভূটিয়ারকোনা-কিল্লাতাজপুরের সংযোগস্থলে নির্মাণাধীন সেতুর একাংশের ঢালাই ধসে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। নদীর স্রোতের কারণে সেতুর অংশবিশেষ ধসে পড়েছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা মো. শাহজাহান বলেন, সরকারি সব নির্দেশনা মেনেই কাজটি করা হচ্ছে। এতে কোনো গাফিলতি করা হচ্ছে না।
এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ভুটিয়ারকোনা-কিল্লাতাজপুর সংযোগস্থলে সুরিয়া নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় কয়েক মাস আগে। ৩০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুর নির্মাণব্যয় এক কোটি চার লাখ ৫১ হাজার টাকা। সেতুটির নির্মাণকাজ করছে মেসার্স সাইফুল ইসলাম নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও কাজের উদ্বোধন করেন। তিন ধাপে নির্মাণাধীন সেতুটি প্রথম ধাপে সাড়ে ৭ মিটার ও দ্বিতীয় ধাপে ১৫ মিটার অংশের পাইলিং ও ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। তৃতীয় ধাপের সাড়ে ৭ মিটার অংশের পাইলিং কাজ করার পর গত বৃহস্পতিবার ঢালাই দেওয়া হয়। ঢালাই দেওয়ার পরপর তা ধসে পড়ে। এলাকাবাসী জানায়, সেতুতে রড, সিমেন্ট, বালু, পাথর সবই খুব কম পরিমাণে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মানও খুবই নিম্ন। সেতু নির্মাণে কী ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে পাশেই সাইনবোর্ডে প্রদর্শন করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তবে এ অভিযোগ আমলে নেয়নি স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ। এদিকে, নির্মাণাধীন অবস্থায় সেতু ধসে পড়ায় স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই এ ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছেন।
মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবীর উদ্দিন জানান, সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদারকিতে থাকা কর্মকর্তাদের বারবার বলার পরও কোনোরূপ প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যসহকারী মনিরুজ্জামান মনির মুঠোফোনে জানান, স্রোতের কারণে খুঁটি সরে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয় কি না জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি) সুলতান মাহমুদ বলেন, সেতু নির্মাণে কোনো নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না। স্রোতের কারণে অস্থায়ী খুঁটি সরে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে আবারও ওই অংশ নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সেতু ধসের খবর শুনে প্রকৌশলীকে খবর দিয়ে আনা হয়েছিল। তিনি বলেছেন স্রোতের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঠিকাদার নিজ খরচে নতুন করে ওই অংশের কাজ করে দেবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সেতু নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয় কি না আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
"